ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে ছোট হয়ে আসছে জাপানের নগরীগুলো

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

যে কারণে ছোট হয়ে আসছে জাপানের নগরীগুলো

জাপানের টয়ামা নগরীর লোকসংখ্যা ৪ লাখ ১৮ হাজার। এর প্রায় ৩০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর কি তারও বেশি। সামগ্রিকভাবে জাপানের জনগোষ্ঠীর ২৭ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তদুর্ধ। সে হিসেবে টয়ামা নগরীর ওই বয়সী লোকদের সংখ্যা ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ এই বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩২ শতাংশ হওয়ার কথা। বুড়িয়ে যাওয়া ব্যাপারটি ছাড়াও নগরীর জনসংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৫ সালে সেখানকার লোকসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার। ২০২৫ সালে তা দাঁড়াবে ৩ লাখ ৯০ হাজার। জনগোষ্ঠীর বয়স বেড়ে চলায় এবং সংখ্যা কমতে থাকায় নগরবাসীর যেসব সার্ভিসের প্রয়োজন সেগুলোরও পরিবর্তন ঘটেছে। টয়ামা নগরীর কোদোকাওয়া কেন্দ্রের কথাই ধরা যাক। সেটি একটি রোগ প্রতিরোধ পরিচর্যা কেন্দ্র। ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি প্রাথমিক স্কুলের ওপর এটি নির্মিত। কিন্তু জনসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ব্যাপারটা বেশ ব্যয়বহুল। আর কর্মজীবী বয়সী লোকের সংখ্যা কমে আসার অর্থ হচ্ছে এ ধরনের পরিবর্তনের খরচ মেটানোর জন্য সে অর্থের প্রয়োজন কর রাজস্ব থেকে তা মিলছে না। সচ্ছল থাকার জন্য টয়ামা নগরী শুধু জনসংখ্যা কমানো নয়, নগরীর আকার-আয়তনও কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সে জন্য নগরীর বাসিন্দাদেরও সেবা ব্যবস্থাগুলোকে কেন্দ্র ভাগের দিকে জড়ো করছে। জাপানের বেশিরভাগ এলাকায় এই একই ধরনের সমস্যা। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু স্কুলকে অবসর কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে জাপানে যত না জন্ম হয়েছে তার চেয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ বেশি। এই অবস্থা চলতে থাকলে জাপানের জনসংখ্যা ২০৬৫ সাল নাগাদ এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে এবং প্রতি ১০ জন শ্রমিক বা কর্মীর ৪ জন কমে যাবে। টয়ামার মেয়র মাসাশি মোরি বলেন, জাপান ব্যাপক হারে অভিবাসন গ্রহণ করবে না। দেশটিতে জন্মহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। গুটিকয়েক ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া এতে তেমন কোন সাফল্য পাওয়া যায়নি। সে জন্য জাপানীদের কাছে একমাত্র বিকল্প হলো অনেক কমসংখ্যক লোক নিয়ে জীবনযাপন করতে শেখা। টয়ামা নগরীর প্রথম ফোকাস হচ্ছে সরকারী। বুড়োরা যখন তখন বাইরে বেড়োয় না। তারা অতটা শক্ত-সমর্থও থাকে না। ফলে তাদের অধিকতর সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যারা অপেক্ষাকৃত চটপটে তাদের জন্যও বাস সার্ভিস কঠিন হতে পারে। সে কারণেই হোক, নগরীর বাসযাত্রীর সংখ্যা ১৯৯৫ সালে সেখানে ছিল দৈনিক ৪০ হাজার ২০১২ সালে তা কমে ১৭ হাজারে এসে দাঁড়ায়। নার্সিং সেবার ব্যয়ও ২০১০ সালের পর থেকে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা সমস্যার সমাধান হিসেবে নগর সরকার ট্রাম সার্ভিস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা ব্যবহার করা বুড়োদের জন্য সহজ হবে। তাই সরকারের একটা কাজ হবে বুড়োদের ট্রাম সার্ভিসের কাছাকাছি থাকতে উৎসাহিত করা। খরচ কম রাখার জন্য নগর সরকার মূলত বর্তমান ট্রেন লাইন ও পুরনো ইঞ্জিন এবং কামরা ব্যবহার করছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধক নেই এবং ট্রামে ওঠার জন্য কোন ধাপ নেই যাতে করে দুর্বল ও ভগ্ন শরীরের যাত্রীরা সহজে ওঠানামা করতে পারে। যাদের বয়স ৬৫ বছর কি তারও বেশি তারা কম দামে এক ডলারের কমে টিকিট কিনে নেটওয়ার্কের যে কোন জায়গায় যেতে পারে। নগর সরকার নয়া ট্রাম্প স্টপেজের ৫০০ মিটারের মধ্যে নতুন বাড়ি নির্মাণ ও ক্রয়ের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে এবং নিজের বেশকিছু সম্পত্তি ভাড়া দিচ্ছে। কাদো কাওয়া কেন্দ্র পরিচালনার দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয়ও বহন করছে এই সরকার। তা ছাড়া নগরীর কেন্দ্রস্থলের মধ্যে বুড়োদের প্রয়োজন মেটাতে অন্যান্য স্থাপনা চালু করার জন্য আরও অনুদান দেয়ারও প্রস্তাব করেছে। একজন নাতি বা নাতনি সঙ্গে আনলে বয়স্কদের বিনামূল্যে জাদুঘর ও চিড়িয়াখানায় প্রবেশেরও সুযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ফার্মগুলো বুড়োদের কোন কাজে নিয়োগ দিলে তাদের মজুরির ভর্তুকিও নগর সরকার দিয়ে থাকে। এসব কিছুর ফল দাঁড়িয়েছে এই যে নগরীর অন্যান্য অংশের জনসংখ্যা হ্রাস পেলেও এর কেন্দ্র ভাগের জনসংখ্যা বাড়ছে। কেন্দ্র ভাগে এখন ৩৭ শতাংশ নাগরিকের বাস যা ২০০৫ সালে ছিল ২৮ শতাংশ। নগর সরকার আশা করে যে ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়াবে। নগরীর কেন্দ্র ভাগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেখানে নতুন নতুন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে যা কিনা কর রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক হবে। পৌরসেবা দেয়ার খরচও কমে এসেছে। নগরীর মেয়র বলেন, ‘বুড়োদের সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করার জন্য আমাদের চাই এক ছোট্ট নগরী। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×