ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ৯ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ মানুষ জড়ো করার টার্গেট

জাপার মহাসমাবেশ হবে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

জাপার মহাসমাবেশ হবে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শক্তি পরীক্ষায় মাঠে নামছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরি ধারাবাহিকতায় জাকজমকপূর্ণ মহাসমাবেশের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। যদিও বলা হচ্ছে পার্টির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আয়োজন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে আগামী নির্বাচনে জাপার অবস্থান পরিষ্কার করবেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হতে পারে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিরোধী দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে চলছে রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশ। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতাদেরও সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে এই তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের নাম নেই। জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসমাবেশে সফল করতে ইতোমধ্যে জেলা উপজেলায় আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করতে আলাদা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তি জানান দেয়ার এই আয়োজনে যে কোন মূল্যে সফল হতে চায় জাপা। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় দলটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চান এরশাদ। দলের চেয়ারম্যান নিজেই জানিয়েছেন এই খরচের কথা। সোমবার বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সভায় খরচের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সবচেয়ে বড় সমাবেশের আয়োজন হবে। বাজেট পাঁচ কোটি টাকা। এ বাজেট সংগ্রহ করতে হবে। দেখাতে হবে জনগণ আমাদের প্রতি আকৃষ্ট। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসবে। লঞ্চ, বাস ট্রেন ভাড়া করতে হবে। এজন্য দলের এমপি, প্রেসিডিয়ামের সদস্য, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের পৃথক পৃথক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে এমপিদের থেকে সমাবেশের বেশিরভাগ অর্থ সংগ্রহ করতে চায় দলটি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, দেশের মানুষ ও বিদেশী বন্ধুদের কাছে নিজের শক্তি জানান দিতে এই মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামাতে চান এরশাদ। এজন্য তিনি দলের সকল স্তরের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বশক্তি নিয়োগ করে সমাবেশ সফল করার জন্য। দলের বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে যারা জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের সকলকেই নিজ নিজ নির্বাচনী আসন থেকে কমপক্ষে তিন হাজার নেতাকর্মী সমর্থক নিয়ে মহাসমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর দলের চেয়ারম্যানের এই নির্দেশ ইতোমধ্যে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছেন। মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ইতোমধ্যে দেশের সকল জেলা উপজেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে চলছে প্রস্তুতি। জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় কৃষক পার্টি ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় টিম মহাসমাবেশের প্রচার করার কাজে সারাদেশ সফর করছেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন জেলা উপজেলা সফর করে কর্মীসভা, বর্ধিত সভা ও সমাবেশ করছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের জন্য এরশাদ তিন রকম প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রথম হলো একক নির্বাচন। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নেয়া ও তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ক্ষমতায় আসা। একক নির্বাচনের প্রয়োজনে ইতোমধ্যে দলের প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে। আসন প্রতি প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে তিনজন। এছাড়া মহাজোট করে নির্বাচন করলে ১০০ আসনের তালিকা দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের হাতে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগকে সরাসরি সমর্থন দেবে জাপা। না এলে একক নির্বাচন করবে দলটি। তবে আসন ভাগাভাগি হবে আপোসের ভিত্তিতে। কোন কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বনাবনি না হলে তৃতীয় সারির রাজনৈতিক দল নিয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে চায় জাতীয় পার্টি। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে গণফোরাম, বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এছাড়া এরশাদের নাম সর্বস্ব ৫৯ দলের জোট তো আছেই। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সর্বশেষ সিদ্ধান্ত যাওয়ার পথ দেখাবে। তবে মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচনে নিজেদের চাওয়া পাওয়ার কথা তুলে ধরবেন এরশাদ। পাশাপাশি বিকল্প চিন্তা গুলোও খোলাসা করবেন তিনি। রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতেই এই কৌশলে আগাচ্ছেন সাবেক এই সেনা প্রধান। দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মহাসমাবেশ দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। সবাই দেখবে জাপার কর্মী আছে। সমর্থক আছে। তাই কোন দলই আমাদের ছোট করে দেখার সুযোগ পাবে না। সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে জাপাকে দেখতে হবে। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়াতে চাই। এর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, আগামী নির্বাচন নিয়ে সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন দলের চেয়ারম্যান। সে অনুযায়ী নেতা-কর্মীরা সারাদেশে একযোগে কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া রংপুর সিটি নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল বলেন, শ্যামপুর- কদমতলি থেকে পনের হাজার ও ঢাকা দক্ষিণের অন্যান্য থানা থেকে পনের হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সকল থানা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পথ সভা, প্রচার মিছিল ও চারটি জনসভা হবে।
×