ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতার দুই কর্মী সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতার দুই কর্মী সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলোচিত দুই কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা লেকহেড গ্রামার স্কুলের এক মালিককে। গ্রেফতারকৃত তিন জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তার বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিও) মোতালেব হোসেনকে তুলে নেয়ার অভিযোগে পরিবারের তরফ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নাসির উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারের তরফ থেকে থানায় আরেকটি অভিযোগ করা হয়েছিল। গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ওই দুইজনের পাশাপাশি লেকহেড গ্রামার স্কুলের অন্যতম মালিক খালেদ হাসান মতিনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে স্কুল মালিক মতিনকে জঙ্গীবাদে অর্থায়নের দায়ে গ্রেফতার করা হয়। আর মোতালেব ও নাসিরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারির প্রস্তুতি শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে প্রেষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত নাসির উদ্দিনের প্রেষণ বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সাসপেন্ড করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুলিশের মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সাময়িক বরখাস্ত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নে। তিনি গ্রীন রোডের সরকারী কোয়ার্টারে থাকতেন। বছিলায় নিজস্ব জমিতে তিনি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। সেখান থেকেই তাকে তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছিল পরিবারের তরফ থেকে। আগে থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করলেও দুই বছর আগে নাহিদের পিও হিসেবে বদলি হয়ে মন্ত্রীর দফতরে আসেন। আর মাউশির কর্মচারী নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব। গ্রেফতার দেখানোর পর গত সোমবার রাতে ঢাকার বনানী থানায় ওই তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে গোয়েন্দা পুলিশ। জঙ্গীবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ থাকা লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলার অভিযোগে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জনকণ্ঠকে জানান, যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা ঘুষের টাকা। লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে চার লাখ ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল বলে গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মচারীর বিষয়ে আর তেমন কিছুই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিলে হয়তো, আরও অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যেত। যা হয়তো কোন সময়ই আলোচনায় আসেনি। মামলার এজাহার মোতাবেক, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নাসির উদ্দিন ও মোতালেবের সঙ্গে মতিনের চুক্তি হয়। স্কুল মালিক মতিনের গাড়িতে করেই বনানীতে আরএম গ্রুপ অফিসে গিয়েছিলেন তারা। এ সময় স্কুলটির এমডি ও প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসিফ ইশতিয়াকও ছিলেন। তিন দফায় ৩ লাখ টাকা নেন নাসির উদ্দিন। এর মধ্যে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২৫ ডিসেম্বর ৫০ হাজার টাকা ও চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ২ লাখ টাকা নেয়। নগদ ৩ লাখ টাকা থেকে একটি অংশ পায় মোতালেব। ঘুষের বেশিরভাগ টাকাই নেয় নাসির উদ্দিন। সর্বশেষ কিস্তির টাকা নেয়ার সময় বনানী ডি ব্লকের ১৩/১৫ নম্বর সড়কের ৩৯ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে নাসির উদ্দিন গ্রেফতার হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির উদ্দিন ঘুষের টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে। তার কাছ থেকে ঘুষের টাকাও পাওয়া যায়। এমনকি মতিনের কাছে বেআইনীভাবে রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্র হস্তান্তর করার কথাও স্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতারকৃত দুই কর্মকর্তা মোতালেব ও নাসির উদ্দিন। জানা গেছে, লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডে ফাইল চালাচালি করছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব এবং উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন। লেকহেড গ্রামার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দুই কর্মকর্তা কর্মচারী মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেফতারকৃত দুইজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করা হয়েছে জানিয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আরও জানান, কেবল সরকারীই নয়, বেসরকারী ক্ষেত্রেও দুদকের কার্যক্রম বিস্তৃত। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অর্জন এবং ভোগ দখলে রাখা সম্পূর্ণভাবে বেআইনী। যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবে দুদক। মঙ্গলবার বিকেলে আসামিদের ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করেন বনানী থানায় দায়েরকৃত মামলার বাদী ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধা। আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলাম।
×