ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মসলার চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

মসলার চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের যেসব জেলায় পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার চাষ বেশি হয় সেখানকার কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে। ঘাটতি পূরণে ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে ১০৯ প্রকার মসলা চাষ করা হলেও বাংলাদেশে প্রায় ৪৪ জাতের মসলা ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে চাষ করা হয় মাত্র ৩৪টি। এ জন্য মসলার চাষ বাড়াতে গবেষণা জোরদারের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য শস্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মসলার জমি খাদ্যশস্য চাষের আওতায় চলে এসেছে। এ কারণে মসলার উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজসহ যে সব মসলার চাষ দেশে হয়, সেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেয়ার কথা বলেছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এতে মোট ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়, যার মোট খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা বিতরণ জোনের আওতায় ছয় জেলার ১৩ উপজেলায় বিদ্যুত বিতরণের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, কুমিল্লা জোন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী ১৩ উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত বিতরণ করতে প্রয়োজনীয় সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ৬৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চলতি মাস থেকে ২০২১ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। যে ১৩টি উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এগুলো হলো-কুমিল্লা সদর উপজেলা, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও বুড়িচং উপজেলা; ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা; চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলা; নোয়াখালী জেলার মাইজদি উপজেলা, বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে প্রকল্প ॥ সরকারী কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব হতে সিনিয়র সচিব পর্যায়ে এক হাজার ৭০০ কর্মকর্তা বিদেশে মাস্টার্স কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, রিফ্রেশার্স কোর্স ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকবে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত ‘বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের হার্ভাডে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের প্রকল্পকে নিয়মিত কর্মসূচীর আওতায় আনার কথা বলেছেন। একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের সংযোগ নদী খনন, সেচ সুবিধার উন্নয়ন এবং মৎস্য চাষ (৩য় সংশোধিত) (প্রস্তাবিত)’ প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন’ প্রকল্প। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্প, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘মরজাল- বেলাব সড়ক ও পোড়াদিয়া-বেলাব জেলা মহাসড়ক দু’টি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘বগুড়া শহর থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘জিএমডিএসএস এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম স্থাপন’ প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের ‘ইন্ট্রোডাকশন অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন (ভ্যাট অনলাইন)’ প্রকল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্প, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেক সভায়। মন্ত্রী জানান, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে প্রায় ৭৪১ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
×