ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে মন্ত্রণালয় ॥ পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক

আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সময় ফেসবুক, টুইটার বন্ধ রাখার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সময় ফেসবুক, টুইটার বন্ধ রাখার উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় ফেসবুক, টুইটার সাময়িক বন্ধ রাখা হতে পারে। প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে অন্যান্য পদক্ষেপের বাইরেও ফেসবুক, টুইটার সাময়িক বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও উদ্যোগের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর তিনদিন আগে থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশও বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে চলতি মাসেই সচিবালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সভায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার দিন সকালে ফেসবুকে মিলছে প্রশ্ন। সরকারের কোন সংস্থা এমনকি বিটিআরসিও এ সঙ্কটের কূলকিনারা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিটিআরসি ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দেয়া নানা সুপারিশের আলোকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপে যেতে চায় মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ফেসবুক যারা পরিচালনা করেন (তাদের কাছে) একটা লিমিটেড টাইমের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। এখন দেখা যাক এটা আলাপ করে কীভাবে করা যায়। ফেসবুক একেবারে বন্ধ তা নয়, একটা লিমিটেড টাইমের জন্য আমরা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষার সময় ফেসবুকটা বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার একটা লিমিটেড টাইমে যখন ওই বিষয়টা (ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস) ঘটতে পারে ওটা নির্ধারণ করে আমরা চেষ্টা করব। বিটিআরসি ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তিগত যে সুযোগগুলো তারা নেয় সেটা বন্ধ করতে চিন্তা চলছে, এটা লিমিটেড টাইমের জন্য, এতে কেউ কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এটা জাস্ট একটা বলা যায় দুই-এক ঘণ্টার জন্য, এতে কিছুই হবে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য আমরা খুবই ডেসপারেট, খুবই অ্যাগ্রেসিভ।’ পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়, সকালে দুই-এক ঘণ্টার জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখলে তাতে লাভ হবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ দুই-তিন বছরের অ্যানালাইসিস করে গবেষকরা দেখেছেন, ওই ভোররাতে, সকালে এমন হয়। অনেক জায়গায় দূরের একটা গ্রামাঞ্চলে, হাওড় অঞ্চলে, পাহাড় অঞ্চলে আমাদের সেন্টার আছে এবং তারা ভোরবেলা (প্রশ্ন) নিয়ে যান। ভোরবেলা যেটা দেয় (ফেসবুকে প্রশ্ন) তার মধ্যে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় বলেও নিশ্চিত করেন মন্ত্রী। এদিকে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আগে আধাঘণ্টা পরে এলেও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হত, আমরা এবার সেটা গণ্য করব না। যেহেতু প্রশ্ন দেয়া হয় ১০টার সময়। এতদিন এর আধ ঘণ্টা পরেও পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারত। আমরা সকল পরীক্ষার্থীকে বলে দিচ্ছি যে, আধাঘণ্টা আগে অর্থাৎ সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে সিটে বসতে হবে। ঠিক সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে যানজট কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে হলে তা আগে থেকেই বিবেচনায় নিয়ে বাসা থেকে রওনা হওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিব প্রশ্নের খাম খুলবেন, এর আগে তিনি প্রশ্নের প্যাকেট খুলতে পারবেন না। সাড়ে ৯টার আগে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। মামলা হবে, জেলে যাবেন, চাকরি যাবে। কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্ট ফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন। অন্য কেউ সঙ্গে কোনো ধরনের মোবাইল রাখতে পারবেন না। শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিভাবকদের বলছি, তারা যেন উপলব্ধি করেন পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য অসৎ পথ অনুসরণ করে নিজের সন্তানকে নৈতিকভাবে তিনি ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন। যারা শিক্ষকতা পেশায় এসে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করছেন তারা দয়া করে (চাকরি) ছেড়ে যান। কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর ৩ দিন আগে থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কোন কোচিং সেন্টার খোলা রাখা যাবে না। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জড়িত থাকলে কোন অপরাধীর রক্ষা নেই। সে যেই হোক। কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোচিংয়ের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সম্পৃক্তরা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। কোচিং সেন্টারগুলোর অনেকের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন ফাঁসের সরাসরি প্রমাণও মিলেছে। তাই এবার পরীক্ষার সময় কোন কোচিং খোলা রাখা যাবে না। কৃষি ও আইটি খাতে বিনিয়োগ করবে এডিবি ॥ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় কৃষি ও আইটি খাতের উন্নয়ন এবং এ খাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্প দু’টির অধীনে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কিছু বিশ^বিদ্যালয়ে উন্নত অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এডিবির হিউম্যান এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন ডিরেক্টর সাংসুপ রার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। সাংসুপ রা বলেন, এডিবি মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালে এবং কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু করতে চায়। এডিবি এ লক্ষ্যে যুগোপযোগী পাঠ্যক্রমও প্রণয়ন করবে। প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে এডিবি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বিশ^বিদ্যালয়সমূহের কাছ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহ দেশের কৃষি ও আইসিটি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশনকে বেগবান করবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কৃষি ও আইটি খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।
×