ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কালকিনিতে এক স্কুলে শিক্ষার্থী পাঁচ, শিক্ষিকা চার

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

কালকিনিতে এক স্কুলে শিক্ষার্থী পাঁচ, শিক্ষিকা চার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালকিনি, মাদারীপুর, ২৩ জানুয়ারি ॥ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন মোট ৫ জন এবং শিক্ষিকা রয়েছেন মোট ৪ জন। জরাজীর্ণ এ বিদ্যালয়ে চলছে কোন রকম পাঠদান। এ বিদ্যালয়ে পাঠদান ও উপবৃত্তি না দেয়ায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি না হয়ে শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে অন্য বিদ্যালয় ভর্তি হচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়েই পাশের অন্য বিদ্যালয় ২ শতাধিক কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন যাওয়া-আসা করে। দীর্ঘদিন যাবত এরকম হওয়া সত্বেও শিক্ষা অফিসও তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকেই ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষিকা বছরের বেশির ভাগ সময় ছুটি না নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। একাধিকবার ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত দরখাস্ত উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে দেয়া হলেও তার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই শিক্ষিকার কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমে গিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তাছাড়া স্কুল সরকারী হওয়ার দুই বছরের মাথায় উপবৃত্তির টাকা ইয়াসমিন নামে এ শিক্ষিকা আত্মসাৎ করায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উপবৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। ২০১৮ সালে নতুন বছরেও কোন প্রকার ছুটি না নিয়েই বিদ্যালয়ে আসেন নি তিনি। বিদ্যালয়ে গিয়ে ২ জন শিক্ষিকাকে পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি বাকি দু‘জনকে। শিক্ষিকারা ঠিক মত বিদ্যালয়ে না আসায়, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় এবং উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী তাদের ছেলে-মেয়েদের দূরের স্কুলে পড়াশুনা করাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির হাজিরা খাতায় ৪৫ জনের নাম থাকলেও স্কুলে উপস্থিত থাকে ৫ জন। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা জানায় তারা পড়াশুনা করতে স্কুলে এসেও বেশিরভাগ সময় ঐ শিক্ষিকাকে স্কুলে পায় না। যদিও আসেন তাহলে অল্প সময় থেকেই চলে যান। একটি ভাঙ্গাচুড়া স্কুলে পড়াশুনা করে এবং উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয় না। সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নতুন ভবনেরও দাবি তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এালাকাবাসী বলেন, ‘আমরা এই স্কুলে কেন পড়াশুনা করাবো বলেন? স্কুলে বেশিরভাগ সময় স্যারেরা থাকেন না। দুই একজন থাকে তারাও ছাত্র-ছাত্রী না আসায় অলস সময় কাটায়। তারপর এই স্কুলে কোন টাকা দেয়া হয় না। আমরা অন্য স্কুলে পড়ালে পড়াশুনা ভাল হয় এবং উপবৃত্তির টাকাও পাই।’ পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) মিনতি মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী আছে। তবে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ঘর ও উপবৃত্তি না পাওয়ায় বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী অন্য বিদ্যালয় চলে গেছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে আমরা ৪ জন শিক্ষিকার মধ্যে একজন থাকে বিভিন্ন সময় ট্রেনিং এবং আর একজন কোন প্রকার ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকেন। পরপর তিন দিন অনুপস্থিত থাকার পর আমি তাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে জানান আমি একটি ট্রেনিংয়ে আছি। এরপর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে তিনিও আমাকে জানান আমার কাছে তার কোন দরখাস্ত নেই বা সে কোন প্রকার ছুটি নেয় নাই।’ অনুপস্থিত শিক্ষিকা ইয়াসমিন বলেন ‘আমি ফোনে প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছি। ১৮৬ নং পশ্চিম মাইজপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি ছাড়াও এলাকাবাসী উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে কয়েকবার এ বিষয় দরখাস্ত দিয়েছি ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। কিন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা তারা কেন নেয়নি বলতে পারবো না। কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুলের ঘটনাটি আসলে পারিবারিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি উদ্যোগ নিয়েও কোন সমাধান করতে পারিনি। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘এই ঘটনা যদি সত্য হয় আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
×