ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুমন্ত গুপ্ত

শূন্য থেকে সেরা হলেন ফারহানা এ রহমান

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

শূন্য থেকে সেরা হলেন ফারহানা এ রহমান

১৫ বছর আগে বলতে গেলে শূন্য হাতেই শুরু করেছিলেন ফারহানা এ রহমান। সেদিনের সেই অচেনা গৃহিণী এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল, জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা। ইউওয়াই সিস্টেম্স লিমিটেড এর সিইও ফারহানা এ রহমান। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে সফল কয়েকটি নামের প্রথম দিকেই আসে তাঁর নাম। আইটি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য দেশসেরা নারী উদ্যোক্তার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। তারা শুরুর গল্পের আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে সেই একটা চাকরির পেছনে ছোটা এবং চাকরি জোটার পরই পরিবার এবং সমাজের চোখ রাঙানি সামলে এগিয়ে চলার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ফারহানার কাছে সেই চ্যালেঞ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাফল্যের চূড়ায় ওঠার অভিলাষ। সফটওয়্যার খাতে নিজস্ব মেধাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালে ফারহানা রহমান নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন ইউওয়াই সফটওয়্যার কোম্পানি। সে সময় সফটওয়্যারে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন। অথচ সন্তানের দেখাশোনার পরও এমন এক চ্যালেঞ্জিং পেশায় সকল বৈরিতাকে হার মানিয়ে সামনে এগিয়েছেন ফারহানা। মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপ, আউটর্সোসিং ওয়েবসহ বিভিন্ন কাজে তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। ফারহানা রাহমান ২০০৩ সাল থেকে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেন। ২০০৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ফারহানা রহমানের ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেড এরই মধ্যে গুণগত মানের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছে আইএসও ৯০০১-২০০৮ সনদ। ছোটবেলা থেকেই তার নিজে কিছু করার চেষ্টা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাদ্য এবং পুষ্টিবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে দেন। শুরুতেই তিনি গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করেছিলেন। সাফল্য পেতে তিনি অনেক ছেলে কর্মীদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন। ফারহানার আগ্রহে সবার আগে ছিল আইটি সেক্টর। ২০০৩ সালে আপলোড ইয়োর সেলফ সিস্টেম নামে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। এর আগে গ্রাফিক্স এবং ওয়েব ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনাও করেছিলেন। তার তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইটের গ্রাফিক্স ডিজাইন, আইওএস এবং এ্যান্ড্রয়েডের জন্য এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে থাকে। শুধু তাই নয় তাদের কাজের ক্ষেত্র দেশে নয় বরং দেশের বাইরে। আপলোড ইয়োরসেলফ সিস্টেমের বেশিরভাগ কাজই চলে যায় আমেরিকা, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসে। ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারে বাংলাদেশে পথপ্রদর্শক ফারহানা রহমানের প্রতিষ্ঠান। ‘ভ্যাট দিয়ে থাকে ক্রেতা বা সেবা গ্রহিতা। যে কোন প্রতিষ্ঠানের এই ভ্যাট ব্যবস্থাপনায় একজন অপারেটরের কিংবা পরামর্শক রাখতে হয়। সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানই বাড়তি জনবল ছাড়াই সহজেই তার ভ্যাট ব্যবস্থাপা করতে পারে। আমাদের ইউওয়াই ভিএমএস (ভ্যাট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার) দেশের ছোট, বড় কোম্পানি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভ্যাটের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিল। যে পাঁচটি কোম্পানির সফটওয়্যার এনবিআরের তালিকাভুক্ত তার মধ্যে অন্যতম ইউওয়াইভিএমএস। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে এসব সফটওয়্যার ব্যবহার বাড়বে। আইটি সেক্টরে কাজ করতে হলে শুধু যে ডিগ্রীধারীই হতে হবে সেটা অনেক পুরনো ধারণা বলেই মনে করেন ফারহানা। তিনি বিশ্বাস করেন, যদি ভালমতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায় তাহলে যে কোন ক্ষেত্রেই সাফল্য আসবে। কারণ বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের অনেক দূরে যাওয়ার মতো যোগ্যতা এবং সামর্থ্য দুটোই আছে।
×