ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই

অভিযাত্রিকের সক্ষম প্রকল্প লড়াকুদের সাহায্য করছে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

অভিযাত্রিকের সক্ষম প্রকল্প লড়াকুদের সাহায্য করছে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ মিরপুর দুয়ারিপাড়া বস্তির বাসিন্দা আব্দুল বারেক। ঘরের সামনে মাটিতেই অল্প কিছু আলু পেঁয়াজ নিয়ে বেঁচা-কেনা করতেন। তার মেয়ে সাহেদা অভিযাত্রিক স্কুলের ৩য় শ্রেণীতে পড়ছে। অভাবের সংসারে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন বারেক। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে একটি দোকান কিনতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত সক্ষম প্রকল্পের মাধ্যমে বারেক মিয়ার দোকানটি নতুন করে তৈরি করে দেয়া হয় একটি চৌকি, টিন এবং রং করে। পুঁজি হিসেবে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। এখন দোকান আগের থেকে বেশ ভাল চলছে। তিনি জানান, আশা করছি এখন থেকে সংসারে আয় আগের থেকে বাড়বে। সঞ্চয় করে স্বাবলম্বী হতে পারব। এবং মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে আর কোন বাধা থাকবে না। নিজের পরিবার নিয়ে মিরপুরের বৃন্দাবন এলাকায় থাকেন সোনিয়া বেগম। কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি সংস্থার ট্রেনিং প্রকল্পের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন তিনি। প্রশিক্ষণ নেয়া ২০জনের মধ্যে সোনিয়া বেগম প্রথম স্থান লাভ করেন। কাজ করার প্রচুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাবের কারণে সেলাই মেশিন কেনার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি তার। সক্ষম প্রকল্পের মাধ্যমে তার জন্য একটি নতুন সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হয়। একটি সেলাই মেশিন থেকে কীভাবে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন সোনিয়া। বর্তমানে তিনি নিজ বাসাতেই অর্ডার নিয়ে ড্রেস সেলাই করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যাকাতের অর্থ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের ‘সক্ষম’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো- ‘যে পরিবারটি এবার সাহায্য নিচ্ছে আগামী এক বছর পর অন্তত এরা নিজেরা সাহায্য নিবেই না বরং নিজেদের ফিতরা প্রদানের সামর্থ্য যেন অর্জন করতে পারেন।’ জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য কোন অসৎ পথকে অবলম্বন না করে, প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা লড়াই করে চলেছেন, সেই সকল যোদ্ধা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে ‘সক্ষম’ নামে দেশব্যাপী একটি বিশেষ প্রকল্প পরিচালনা করছে উন্নয়ন সংস্থা অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি এই প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। মোঃ আনোয়ার হোসেন। বাড়ি কেরানিপাড়া, রংপুর। কিছুদিন আগেও ভাড়ার রিক্সা চালাতেন। রোজ মহাজনকে জমা দিতেন ১০০ টাকা। বাকি যা উপার্জন তা দিয়ে দিন আনি দিন খাই-এর মতো অবস্থা। নিজের সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। সক্ষম প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৪ জুন তার হাতে তুলে দেয়া হয় নতুন রিক্সা। তার সঙ্গে শর্ত একটাই দেয়া হয়, ‘উন্নতি করে দেখাতে হবে’। তিনিও ওয়াদা করলেন আগের মহাজনকে দেয়ার টাকাটা নিজেই নিজের কাছে সঞ্চয় করবেন এবং সামনে টাকা জমিয়ে আরও কিছু করবেন। আনোয়ার হোসেনের মতো জীবনযুদ্ধে হারতে বসা আরেকজন মোঃ আব্দুল সালাম। নদী ভাঙ্গনে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে গত বছর ঢাকায় আসেন সালাম। স্ত্রী এবং আদরের দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন মিরপুর দুয়ারিপাড়া বস্তির একটি ছাপড়া ঘরে। বস্তির পাশের রিক্সার গ্যারেজ থেকে আধা বেলার চুক্তিতে রিক্সা ভাড়ায় চালান শুরু করেন পরিবারের মুখে দুই বেলা অন্ন জোগানোর আশায়। কিন্তু সে আশায় বাধ সাধলো ভাড়ার রিক্সার অল্প টাকা, যে টাকার সিংহভাগ দিয়ে দিতে হয় রিক্সার প্রকৃত মালিককে। অগত্যা বেঁচে থাকার তাগিদে তার স্ত্রী খোলেদা বেগম মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। সালাম ও তার স্ত্রীর খুবই ইচ্ছা ছিল দুই মেয়ে ইয়াসমিন এবং শারমিনকে পড়ালেখা করাবেন। কিন্তু যেখানে দু বেলা দুমুঠো ভাত যোগাড় করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল সেখানে সন্তানদের পড়ালেখা করাবার ইচ্ছা যেন স্বপ্নই রয়ে গেল তাদের।
×