ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজ ॥ জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে সিরিজে টিকে থাকল চান্দিমালরা

আসল রূপে ফিরছে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা?

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

আসল রূপে ফিরছে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার জন্য ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ ছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজে টিকে থাকতে হলে রবিবার জিম্বাবুইয়েকে হারানোর কোন বিকল্প পথ খোলা ছিল না। এই ম্যাচেই কিনা আসল রূপে ফেরার ইঙ্গিত দিতে শুরু করে দিল শ্রীলঙ্কা। জিম্বাবুইয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিল। সহজ জয় তুলে নিল। সিরিজে টানা দুই ম্যাচ হারের পর জিতল। সিরিজেও টিকে রইল। যে জিম্বাবুইয়ে টানা তিন ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। ত্রিদেশীয় সিরিজেও দুই দলের মধ্যকার প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের হারিয়েছে। সেই জিম্বাবুইয়েই এবার পাত্তা পেল না। থিসারা পেরেরার বোলিং ও ব্যাটিং নৈপুণ্যে জিতে শ্রীলঙ্কা। ১৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। ৩১ বল হাতে রেখে ২০২ রান করে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। গত বছর তো শ্রীলঙ্কাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কি প্রতাপশালী দলটি একেবারে দুমড়ে মুছড়ে গেছে। যার সঙ্গেই খেলেছে। তার সঙ্গেই হেরেছে। এতটাই বাজে অবস্থা হয়েছে। ‘নতুন বছরে’ শ্রীলঙ্কাকে নতুনভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে ভাবা হয়েছিল। চন্দিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ ছেড়ে শ্রীলঙ্কার কোচ হয়েছেন। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আবার অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য নিজ হাতে দল গড়েছেন। মনে করা হচ্ছিল, হাতুরাসিংহের ছোঁয়ায় বদলে যাবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যায় লঙ্কানরা। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের কাছে ১২ রানে হারের পরতো বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানে হারে। এত বড় ব্যবধানে হারের পর শ্রীলঙ্কার সিরিজে টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে ওঠে। টিকতে হলে তাই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয় ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা ছিল না। এমন ম্যাচেই কিনা ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। প্রতাপের সঙ্গেই ঘুরে দাঁড়ায়। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস এই ম্যাচেও খেলতে পারেননি। তবে শ্রীলঙ্কার জিততে খুব বেগ পেতে হয়েছে। তবে জয় পেতে খুব সাবধানী হয়ে খেলতে গিয়েই এ পরিস্থিতিতে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ৩৩ রানে উপুল থারাঙ্গা (১৭) আউটের পর দুই কুশল (পেরেরা ও মেন্ডিস) মিলে যে ১০০ রানের জুটি গড়েন সেখানেই শ্রীলঙ্কা জয় পেতে অনেক এগিয়ে যায়। দুইজন মিলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। কোন ঝুঁকি নেন না। ১০৩ রানে গিয়ে কুশল পেরেরা (৪৯) আউট হয়ে যান। ব্লেসিং মুজারাবানি আউট করে দেন। পেরেরার আউটের পর ১১৭ রানের মধ্যেই মুজারাবানি আরও ২টি উইকেট তুলে নেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেটের পতন ঘটে শ্রীলঙ্কার। মেন্ডিস ৩৬ রানে ও ডিকভেলা ৭ রানে আউট হয়ে যান। তখন ম্যাচে একটু উত্তেজনা তৈরি হয়। জিম্বাবুইয়ে খুব আহামরি কোন বোলিং করলে ম্যাচ জিতেও যেতে পারে। এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়। দিনেশ চান্দিমাল ও আসেলা গুনারতেœ মিলে এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ১৪৫ রান পর্যন্ত দুইজন এগিয়েও যান। এমন সময় গুনারতেœ (৯) আউট হয়ে গেলে ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। শ্রীলঙ্কাও চাপে পড়ে। সেই চাপ দূরে ঠেলে দেন চান্দিমাল ও থিসারা পেরেরা। দুইজন মিলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে দেন। পেরেরা অপরাজিত ৩৯ ও চান্দিমাল অপরাজিত ৩৮ রান করে দলকে জেতান। জিম্বাবুইয়ে আবারও চান্স নিয়েছিল। রৌদ্দকরোজ্জ্বল আকাশ পেয়ে টস জিতেই ব্যাটিং নেয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই জিতেছিল। মনে করা হচ্ছিল, এবারও কী বাজিমাত করবে জিম্বাবুইয়ে? কিন্তু হলো না। আগে ব্যাটিং নিলেই তো হয় না। ব্যাটিংটাও ঠিকঠাক মতো করতে হয়। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের মধ্যে যদি ৪ জন শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে যান সেই দল আর কতদূর যেতে পারে। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (২০), সুলেমন মিরে (২১), ক্রেইগ আরভিন (২), সিকান্দার রাজা (৯) যখন দলের ৭৩ রানের মধ্যেই আউট হয়ে যান তখনই বোঝা হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে খারাপ দিনের দেখা পেতে চলেছে। শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন থিসারা পেরেরা। প্রথম চার উইকেটের তিনটিই যে তিনি শিকার করে নিয়েছেন। অসাধারণ বোলিং করেছেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই তো জিম্বাবুইয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায়। বিশেষ করে সিরিজে দুই ব্যাটসম্যানই জিম্বাবুইয়ের ভরসা। একজন ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। আরেকজন সিকান্দার রাজা। মাসাকাদজাকে যখন দলের ৪৪ রানে গিয়ে পেরেরা আউট করে দেন তখনই জিম্বাবুইয়ের বিপদ শুরু হয়ে যায়। পেরেরা বল করতে এসে প্রথম ওভারে কোন উইকেট না পেলেও এরপর টানা তিন ওভারে তিন উইকেট তুলে নেন। মাসাকাদজাকে আউটের পর আরভিন ও মিরেকে সাজঘরে ফেরান। প্রথম তিন উইকেটই পেরেরার দখলে চলে যায়। এরপর সিকান্দার রাজা যখন এগিয়ে যাওয়ার আশা দেখানো শুরু করেন তাকে আটকে দেন এ সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা স্পিনার লাকশান সান্দাকান। তাতেই যেন জিম্বাবুইয়ের বারোটা বেজে যায়। মনে করা হয় জিম্বাবুইয়ে বোধহয় দেড় ’শ রানও করতে পারবে না। কিন্তু অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর ঠিকই যতটা পেরেছেন দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জিম্বাবুইয়ে দলে আর না খেলার কথাই ছিল টেইলরের। কিন্তু ২০১৫ সালের পর আবার ফিরেছেন। টেইলের নতুন ফেরা এই ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই। প্রথম দুই ম্যাচে চেষ্টা করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিপদের সময় হাল ধরার চেষ্টা করেন। হাফসেঞ্চুরিও করেন। ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। ম্যালকম ওয়ালারকের নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৬৬ রানের জুটিও গড়েন। এই জুটিই জিম্বাবুইয়েকে এতদূর আনে। ওয়ালারকে আটকে দেন সান্দাকান। এরপর ১ রান যোগ হতেই পিটার মুর রান আউট হয়ে যান। তবুও টেইলরকে আউট করা যাচ্ছিল না। স্কোরবোর্ডে রানও যোগ হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত পেরেরাই আবার ত্রাতা হয়ে ফেরেন। বল হাতে নিয়ে টেইলরকে আউট করে দেন। ১৭১ রানে টেইলর আউট হওয়ার পর ৪৪ ওভারেই জিম্বাবুইয়ের ইনিংসের দম ফুরায়। টেইলর আউট হওয়ার পর নুয়ান প্রদীপ গতির ঝড় তোলেন। মুহূর্তেই শেষ তিনটি উইকেট শিকার করে নেন। ১৯৮ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। এমন রান করার পরই শ্রীলঙ্কা যে জিতবে, সিরিজেও টিকে থাকছে তা বোঝা হয়ে যায়। সঙ্গে সবার মনে একটি প্রশ্নও জাগে, আসল রূপে ফিরছে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা? একটি জয়ই যে বাজে মুহূর্তগুলো দূর করে দিতে পারে। সেই মুহূর্ত কী মিলে গেল শ্রীলঙ্কার?
×