ওয়াজেদ হীরা ॥ জমজমাট বাণিজ্যমেলার সময় বাড়ানো না হলে এটিই শেষ সপ্তাহ। সময় শেষের দিকে হওয়ার কারণে প্রতিদিনই ভিড় লেগে থাকছে মেলায়। কেনাকাটাও হরদম চলছে। তবে বড় স্টল বা প্যাভিলিয়নের চেয়ে ছোট ছোট বাহারি পণ্যের স্টলগুলোতেই দর্শনার্থীদের চাপ বেশি। সেই সঙ্গে এসব স্টলের পণ্য বিক্রিও বেশি। দর্শনার্থীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপেও খুশি ব্যবসায়ীরা।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শুরু থেকেই একটা জমজমাট অবস্থা এসব ছোট ছোট স্টলে। মেলা শেষের দিকে হওয়াতে আগের চেয়েও বহুগুণ বেড়েছে কেনাকাটা। দর্শনার্থীরা আসছেন, দেখছেন। পছন্দ হলে পণ্য নিয়ে নিচ্ছেন। সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ছোট ছোট স্টলে। সাজসজ্জার পণ্য, বাহারি রঙের পোশাক, হরেক ডিজাইনের জুতা, কিংবা ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও মিলছে বিভিন্ন স্টলে। কোন কোন স্টলে আবার শুধু পারফিউম বিক্রি হচ্ছে। কেউ ছোট স্টলে বিক্রি করছে বিভিন্ন আচার বা পপকর্ণ। মেলার অভ্যন্তরে চারপাশেই রয়েছে এসব স্টল। আর মেলার মধ্যমাঠ জুড়ে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন।
প্যাভিলিয়নের চেয়ে জায়গা স্বল্পতা হওয়ায় অল্প মানুষের চাপেই বেশ জমজমাট মনে হয় এসব স্টল। একটি প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করলে সব পণ্য দেখতে সময় লাগে তাই সহজে বের হতে পারে না ক্রেতারা। তবে সেক্ষেত্রে মেলা ঘুরতে গিয়ে হরহামেশাই এসব স্টলে প্রবেশ করে বিভিন্ন জিনিস কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
ফুলদানি কিংবা ফুল কিংবা বিভিন্ন অলঙ্কার বিক্রেতা যে পণ্যের স্টল দিয়েছে সবই এখন বেশ জমজমাট। আচার বিক্রি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ওয়াহাব বলেন, ছোট স্টল হলেও ক্রেতাদের সামলানো মুশকিল। বিক্রি বেশ ভালই। বাচ্চার জন্য খেলনা কিনেছেন হাসনাত হোসেন বলেন, ‘ছোট স্টল আর বড় স্টল পণ্য ভাল হলেই হলো। আর বড় হলে জটপট কেনাকাট করতে অসুবিধা মনে হয়। এটা সেটা দেখে সময় কেটে যায়।’
মেলাঘুরে আরও দেখা গেছে সব ধরনের পণ্য মেলায় পাওয়া গেলেও নারী-শিশু ও গৃহস্থালী পণ্যের স্টলগুলোই বেশি জমজমাট। স্টলগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কথা বলারও সুযোগ খুব একটা পাচ্ছেন না। তবুও ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা তাদের।
একাধিক স্টলের পণ্য বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের পণ্য। বাহারি রঙের কৃত্রিম ফুল বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, মেলার প্রথম দশদিন একেবারেই বিক্রি ছিল না। এরপর কিছুটা বেড়েছে। এখন বিক্রি অনেক ভাল। আগামী প্রতিটি দিন ভাল বিক্রি প্রত্যাশা তার। এদিকে, খাবার প্যাভিলিয়ন বা স্টলে ভিড় থাকলেও এর চেয়ে তাৎক্ষণিক খাবার পাওয়া যায় এমন স্টলই বেশি জমজমাট। বিশেষ করে মেলায় বিক্রি করা ইনন্সট্যান্ট নুডুলসে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এর পাশাপাশি পপকর্ণ, বিভিন্ন হাল্কা খাবারের প্রতিও বেশ আকৃষ্ট দর্শনার্থীরা। মেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান স্থান পেয়েছে। এরা নানা ধরনের জুয়েলারি ও খেলনা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, মেলা মাঠের ইজারাদারের ঘনিষ্ঠ লোকজন টাকার বিনিময়ে এসব হকার বসিয়েছেন। এসব হকার বসানোর কারণে অনেক ক্রেতারাই পণ্য কিনেত ভিড় করছেন আবার নিম্ন মানের পণ্য কিনে ঠকছেন বলে জানান, একাধিক স্টলের ব্যবসায়ীরা। মেলায় দেখা গেছে, এসব হকার তাদের নানা পণ্য নিয়ে এক জায়গায় বেশিক্ষণ বিক্রি করছেন না। আবার বেশিক্ষণ বসলেও কেউ কিছু বলছেনও না। জানতে চাইলে হকাররা জানিয়েছেন তারা টাকার বিনিময়ে আগামীর যে ক’দিন মেলা চলবে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করবে। এ বিষয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার পর্দা নামবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত দশটায় শেষ হয় এই মেলা। হাজারও মানুষের পদচারণায় মুখরিত মেলাপ্রাঙ্গণ।