ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ আবদুল হাই

আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ নিজেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ নিজেই

এবার নির্বাচনে হেরে গেলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি জামায়াত-বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই তারা এবার মরণকামড় দেবে- এ রকম একটি আশঙ্কা থেকে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগের প্রতি স্বদেশ রায় একরকমের সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশই বিচিত্র দেশ যেখানে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে রাজনীতি করা সম্ভব; স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও। কেন জানি না স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ রাজনৈতিক রেটোরিকই বলব; রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের হীনস্বার্থে জিইয়ে রেখেছেন বলে মনে হয়। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে রাজনীতির ধারা জোর করে পালটে দিতে গিয়ে এই যে জেনারেল জিয়া নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী সব গোষ্ঠীকে বিএনপির ছায়াতলে একত্র করলেন; এর সুযোগ নিয়ে ভারত এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। রাজনীতির দাবা খেলায় জিয়াউর রহমানকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নিজেদের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। তাই বিএনপির পক্ষে এখন আর সম্ভব হচ্ছে না তাদের বাদ দিয়ে রজনীতিতে নিজেদের আলাদা অবস্থান সৃষ্টি করা। বাংলাদেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ফিরিয়ে আনতে এটাই এখন বড় অন্তরায়। ইচ্ছে করলেও বিএনপি এখন আর তাদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। বিএনপির সবাই রাজাকার কিংবা সবাই স্বাধীনতাবিরোধী তা বলা যাবে না। মহান বিজয় দিবস; স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস; ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস; ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বিএনপি দলীয়ভাবে পালন করে। জাতীয় পতাকা; জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তাদের কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু ওই যে জামায়াতে ইসলাম এবং উগ্র মৌলবাদী কিছু গ্রুপ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা বিএনপিকে এমনভাবে দেশীয় আন্তর্জাতিক চক্রের কাছে দায়বদ্ধ করে ফেলছে বিশেষ করে পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে- যেখান থেকে বেরিয়ে আসা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ঘরানার নতুনপ্রজন্ম যারা ডিজিটাল যুগে বেড়ে উঠছে তারা যদি রাজনীতিবিমুখ না হয় সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসে- তাহলে হয়ত স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ রেটোরিক রাজনীতিতে আর থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ বলে হয়ত কোন দলের অস্তিত্বই থাকবে না। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে এর কোন পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। কারণ, বর্তমান নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সমালোচনা ছাড়া তেমন সুবিধা করতে পারেন না বক্তৃতা বিবৃতিতে। তবুও স্বদেশ রায়কে ধন্যবাদ দিতে হয় তিনি এ কথা বলতে পারছেন আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই একদিন গতানুগতিক রাজনীতির বিরোধী একটি জনতা জেগে উঠবে, যারা দেশ-জনগণের উন্নতি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা-সমালোচনা করবে। তখন হয়ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ রাজনীতি থাকবে না; যারা বিরোধী দলে থাকবে তারাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই কথা বলবে। লেখক : সাবেক যুগ্ম সচিব
×