ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাখি ও প্রকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

পাখি ও প্রকৃতি

‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ প্রবাদতুল্য বাক্যটিকে মাথায় রেখে প্রশ্ন জাগে : পশু-পাখি-জীবজন্তু ব্যক্তিগত খাঁচা কিংবা চিড়িয়াখানায় আটক রেখে প্রতিপালন কতটা যুক্তিসঙ্গত অথবা ন্যায়ানুগ? কয়েক বছর ধরে অবশ্য বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যের ধারাণাটি গড়ে উঠেছে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সার্বিকভাবে এর ইতিবাচক ফলও মিলেছে বৈকি। যেমন, চীনে পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে গবেষণা করে দুর্লভ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় পান্ডার ব্যাপক প্রজনন ও সংখ্যাবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। অনুরূপ সুমাত্রা ও সাইবেরিয়ান বাঘ। তবে প্রতিবছর শীত ও অন্যান্য মৌসুমে পাখি এবং প্রজাপতি মেলার আয়োজন করে জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়ত সম্ভব। এতে পশু-পাখি-কীটপতঙ্গ কতটা সংরক্ষিত ও নিরাপদ থাকে সে প্রশ্ন রয়েই যায়। যেমন রাশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে পড়েছে শতাব্দীর ভয়াবহ শীত, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রচন্ডতম গরম। একদিকে তাপমাত্রা ৭৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, অন্যদিকে উষ্ণতা অতিক্রম করেছে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার ডিসেম্বরে মস্কোতে সূর্যের দেখা মিলেছে মাত্র ছয় মিনিটের জন্য। বাংলাদেশে সর্বাধিক পরিযায়ী পাখি এসে থাকে সুদূর সাইবেরিয়া থেকেই। প্রচন্ডশীত ও তুষার ঝড়ের দাপট সত্ত্বেও এবার বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে খুব কম। এর একটা আপাত কারণ হতে পারে যে, দেশে পর্যাপ্ত হাওড়-বাঁওড় ও জলাশয় নেই। সংরক্ষিত পাখি কিংবা প্রজাপতি-মৌমাছির অভয়ারণ্যও নেই। চোরা শিকারির উৎপাতও আছে। অরণ্য ও জলাশয় যেটুকু আছে, তাও পর্যটকদের কোলাহল ও দাপাদাপিতে ভরপুর। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব তো আছেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত বছর ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা নির্ধারণের লক্ষ্য এগিয়ে নিতে সরকারী-বেসরকারী অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ১৮৮ দেশের ঐকমত্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় বৈশ্বিক তহবিলের বর্তমান অবস্থা এবং তা বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে শেষ হয় এই সম্মেলন। অবশ্য, এ বিষয়ে খুবই কম আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশও কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে অবলম্বন করছে ধীরগতি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জোরপূর্বক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এতে যোগ করছে বাড়তি ঝুঁকি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অনেক পাহাড়-টিলা-বনাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্রায় সাফ ও সমতলে পরিণত হয়েছে। এতে হাতিসহ বন্য প্রাণীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ার দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের ৪৫০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। উল্লেখ্য, নগর ও স্থানীয় সরকারের একটি বৈশ্বিক জোটের সঙ্গে মিলে সর্ববৃহৎ এই ঋণদাতা সংস্থাটি সাগরপৃষ্ঠের বাড়ন্ত উচ্চতা থেকে সুরক্ষায় ১৫০টি উন্নয়নশীল শহরের যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা দেবে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামও। এটি একটি আশাব্যঞ্জক খবর বৈকি। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশই শুধু নয়, বরং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলাশয়-জলাধার অক্ষুণ্ণ রেখে পশু-পাখি-জীবজন্তু-কীটপতঙ্গ সংরক্ষণ জরুরী ও অপরিহার্য।
×