ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড রানে জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

রেকর্ড রানে জয়

ছুটির দিন শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টাইগারদের লড়াইটার দ্বিমাত্রিক অর্থ করা যায়। প্রথম কথা হলো শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী একটি দলকে নিজেদের মাটিতে পেয়ে কতটা ভালভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটি। তবে দ্বিতীয় ব্যাপারটিই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোন কথা বলেননি টাইগাররা। না বললেও তাদের মনোজগতে যে বিষয়টি ছিল, তা নিয়ে দর্শকদের কোন সন্দেহ নেই। ঘটনার কেন্দ্রে কিছুকাল আগে সাবেক হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ হাথুরুসিংহে। বর্তমানে যিনি তার নিজের দেশের ক্রিকেট দলের কোচ। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার কোচ। তাই বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচে এই কোচের প্রসঙ্গ বার বার আসাটাই স্বাভাবিক। হয়ত এত বিপুলভাবে উচ্চারিত হতো না তার নাম। কিন্তু বহু বিতর্কের জন্ম দিয়ে ক্রিকেটমোদীদের বিরাগভাজন হয়ে তিনি এদেশ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। ফলে তার নিজের দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। বলা বাহুল্য, এই ম্যাচ জিতলে উন্নাসিক ওই কোচ আত্মম্ভরিতা প্রদর্শন করতে ছাড়তেন না। ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও তার একটা সান্ত¡না থাকত। অথচ টাইগাররা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে রেকর্ড ১৬৩ রানে। এই হার শ্রীলঙ্কার জন্য নিশ্চয়ই লজ্জার। হাথুরুসিংহের জন্যও আলাদা কিছু নয়। স্বাগতিক দেশের আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে এই ম্যাচ জিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায়। দুর্দান্ত এক খেলা উপহার দেয়ার জন্য টাইগারদের অবশ্যই অভিনন্দন প্রাপ্য। বছরের শুরুতে তারা এমন জোড়া সাফল্যের নজির রাখল। এই সিরিজে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল দারুণ জয় নিয়ে এসেছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল টিম জিম্বাবুইয়ের কাছেও হেরেছে শ্রীলঙ্কা। আসা যাক বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত খেলেছে। সীমিত ওভার ম্যাচে বল গুনে গুনে রানের গতি বাড়াতে হয়, উইকেট ধরে রাখতে হয়। এই মূল ব্যাকরণটি টাইগাররা নিখুঁতভাবে অনুসরণ করেছে। ওভারের সংখ্যা যত বেড়েছে, রানের গতিও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উর্ধমুখী হয়েছে। এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেশাদারিত্ব। তামিম-সাকিব-মুশফিক- এই তিনজনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। সত্যি বলতে কি, এখন বাংলাদেশ দল বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিং সব শাখাতেই এতটা লড়াকু হয়ে উঠেছে যে, বিশ্বের যে কোন দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল তাদের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে সমীহ বজায় রাখবে। বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। মেধা ও প্রতিভা যদি ঈশ্বর প্রদত্ত বলে মেনেও নিই; তারপরও থাকে তার চর্চা, অনুশীলন ও সাধনার বিষয়টি। আমরা আগেও বলেছি বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়েছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলাÑ এমন কথা বরাবরই বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা আছে বটে। সেটি ব্যতিক্রম হিসেবেই চিহ্নিত। অঘটন বার বার ঘটে না। ক্রিকেটশক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই অঘটনের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ, তথা ক্রিকেটবিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোয় সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে; বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় কাপের ফাইনাল টাইগাররা এমন ব্যবধানে জিতুক যা শুক্রবারের ম্যাচের মতোই চমকিত করবে ক্রিকেটবিশ্বকে- এটাই এ মুহূর্তে দেশবাসীর চাওয়া।
×