ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গ্যালারি কায়ায় মকবুল ফিদার ছাপচিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

গ্যালারি কায়ায় মকবুল ফিদার ছাপচিত্র প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্যের কষাঘাতে তারুণ্যে কাটিয়েছেন বাস্তুহারা জীবন। বোম্বের সড়কে ল্যাম্পের আলোয় একই সঙ্গে এঁকেছেন ও পড়েছেন। জীবিকার তাগিদে এঁকেছেন সিনেমার হোর্ডিং ও পোস্টার। তখনই বুঝেছিলেন রেখা ও রঙের আচরণে সৃষ্টি হয় ইমেজ এবং ইমেজের সেই চলমানতায় বিস্তৃত হয় গল্পের বিবরণ। স্বশিক্ষিত সেই চিত্রশিল্পী একসময় স্বদেশের গন্ডি পেরিয়ে হয়ে ওঠেন বিশ্বখ্যাত। জীবিতাবস্থায় এই শিল্পী দাবি করতেন তিনি নাকি মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই ছবি এঁকেছেন। কিংবদন্তি ভারতীয় সেই চিত্রকর হচ্ছেন মকবুল ফিদা হুসেন। ইন্ডিয়ান পিকাসো খ্যাত সেই শিল্পীর চিত্রকর্ম অবলোকনের সুযোগ পাচ্ছেন রাজধানীর শিল্পানুরাগীরা। ইতোমধ্যে ভারত থেকে ঢাকায় চলে এসেছে সেসব ছাপাই ছবি। সেরিগ্রাফ, লিথোগ্রাফ ও সিল্ক স্ক্রিন মাধ্যমে সৃজিত ৫৯টি ছাপচিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনী। উত্তরার গ্যালারি কায়ায় ‘এম এফ হুসেন : জার্নি ইন গ্রাফিক্স’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির সূচনা হবে আগামী বুধবার। সেদিন সন্ধ্যায় যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। রবিবার রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের ডেইলি স্টার ভবনে গ্যালারি কায়া আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে প্রদর্শনীর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী। প্রদর্শনী সম্পর্কে কথা বলেন চিত্রশিল্পী রণজিৎ দাস ও জামাল আহমেদ এবং চিত্র-সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারতের গণেশ প্রতাপ সিং ও বিনয় এম শেঠের সংগ্রহশালা নিয়ে আসা হয়েছে কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী মকবুল হুদা হুসেনের এই ছাপচিত্রগুলো। ছাপচিত্রের নানা মাধ্যমে সৃজিত ৫৯টি চিত্রকর্ম দিয়ে সজ্জিত হবে এ প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীটি রাজধানীর শিল্পরসিকদের জন্য বিশেষ করে চারুশিক্ষার্থীদের বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মকবুল ফিদার ছবি দেখার মাধ্যমে ভিন্ন অভিজ্ঞতার স্বাদ শিল্পরসিকদের চোখ। গৌতম চক্রবর্তী বলেন, গত দেড় বছর ধরে এ প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছি অবশেষে তা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আশা করছি, শিল্পরসিকরা আলোচিত বৈচিত্র্যময় এ শিল্পীর কাজ দেখে আনন্দ পাবেন। তিনি জানান, প্রদর্শনীর সব ছবি বিক্রির জন্য না হলেও নির্বাচিত কিছু ছবি বিক্রি করা হবে। তিনি জানান, ভারতের দুই সংগ্রাহকের কাছ থেকে এই ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। মকবুল ফিদা হুসেনের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে মঈনুদ্দীন খালেদ বলেন, চিত্রকলার মাধ্যমে ধর্মের সঙ্গে মিতালী গড়েছিলেন শিল্পী। সেখানে যিশুখ্রিস্ট থেকে শুরু করে মহাভারত, রামায়ণ কিংবা মহররমের দুলদুল ঘোড়াও উঠে এসেছে। তবে সেই চিত্রকর্মের লক্ষ্য ছিল ধর্মকে খুশি করা নয় বরং ধর্মের মরমী অবস্থানকে স্পর্শ করা। এভাবেই সর্বধর্মের বিষয়কে করেছেন আপন শিল্পচর্চার বিষয়। এই শিল্পীর ছবি দেখামাত্র দর্শকের কাছে বিষয়ের অন্তর্নিহিত ভাবটা ছড়িয়ে যায়। ফর্ম, জ্যামিতিক নক্সার সঙ্গে ভঙ্গুর রেখাই তার ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার সৃজিত ক্ষণভঙ্গুর রেখা চিত্রকর্মে সৃষ্টি করে গতিময়তা। সহজাতভাবেই সেখানে ঠাঁই পেয়েছে লোক চিত্রকলার রীতি। সব মিলিয়ে চিত্রকলায় অল্প উপদানে বিশাল বিষয়কে প্রকাশ করেছেন মকবুল ফিদা। উঠে এসেছে চিত্রকলার বিবর্তন। এই চিত্রসমালোচক আরও বলেন, ‘ভারত মাতা’ শিরোনামে হিন্দু দেবীর নগ্ন ছবি এঁকে মৌলবাদীদের আক্রোশের শিকার হন মকবুল ফিদা। ভারতের মানচিত্রকে তিনি দেবী হিসেবে চিত্রিত করেছেন তার স্বকীয় অঙ্কন বৈশিষ্ট্যে। তার সমগ্র শিল্পীজীবনে বার বার ঘুরে ফিরে চিত্রপটে এসেছে ঘোড়া ও নানা ধর্মের আখ্যান-অনুষঙ্গ। চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়েও এঁকেছেন। বলিউডের নায়িকা মাধুরীর বিচিত্র রূপ আর তার সাজসজ্জা নিয়ে অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। শহর-গ্রাম-মানুষ-প্রকৃতি-নারী-শিশু-ধনী-গরিব-অভিজাত এমন কোন বিষয় নেই, যা নিয়ে তিনি আঁকেননি। ২৪ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ৩১ জানুয়ারি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্মরণে আবদুল মান্নান সৈয়দ ॥ রবিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্মরণ করা হলো বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দকে। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত এ স্মরণানুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, বাঙালী সংস্কৃতির একটি সমস্যা হচ্ছে নিজেদের মুসলমান পরিচয় দিতে আমাদের মনে একটি সংকোচবোধ হয় যা চোখে পড়ে আবদুল মান্নান সৈয়দের। তার লেখায় পরাবাস্তব যেভাবে এসেছে সেভাবে আর কারও লেখায় আসেনি। চেতনার ভাবনায় তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তিনি ছিলেন সাহিত্যের ঘোর লাগা মানুষ। তিনি আপাদমস্তক একজন কবি, সাহিত্যকর্মী। রাষ্ট্র ও সমাজ তার যথাযোগ্য মূল্যায়ন করতে পারেনি বলে একটি সূক্ষ্ম অভিমান তাকে তাড়া করে ফিরত। দুইবার হার্ট এ্যাটাক তার জীবনীশক্তি অনেকখানি ক্ষয়ে ফেলেছিল। তার অস্তিত্বে সেঁটে গিয়েছিল এক অনপনেয় বিষণœতা। তবে মৃত্যুঅবধি তিনি ছিলেন একজন জীবিত মানুষ। কথার ফাঁকে কৌতুক করা ছিল তার সুনিপুণ অভ্যাস। স্বভাবে বিজনবাসী হলেও তিনি ছিলেন আড্ডার ভক্ত। তবে পড়াশোনা আর লেখালেখির ব্যাপারে এক মুহূর্ত ছাড় দেননি। এ বিষয়ে তিনি সদা উন্নিদ্র, আমৃত্যু চঞ্চল। আবুল হাসনাত বলেন, কবি হিসেবে তিনি ছিলেন এদেশের একজন শীর্ষ কবি। গবেষণা ও সমালোচনাকে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন, যা আর কেউ পারেনি। তার গবেষণা সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসাকে উস্কে দিয়েছে। প্রচ- তোলপাড় করা শক্তি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। বাংলা কবিতায় তিনি যুক্ত করেছিলেন পরাবাস্তববাদী দিগন্ত। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তার ভাষাকে করে তুলেছে ব্যতিক্রমী। তিনি আরও বলেন, দুই বাংলাতে তার মতো সাহিত্যসমালোচক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে ছিল তার অগাধ ধারণা। সমসাময়িককালে তার মতো বড় মাপের লেখক দেখা যায় না। কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় তার সৃজনশীলতা অসাধারণ। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রচুর কাজ করলেও ভগ্নস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তিনি আরও কাজ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, লেখক যেভাবে তার গবেষণাগুলো করতেন তা ছিল খুবই সুন্দর। সম্পাদনায় ও ছিলেন অতুলনীয়। জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু কাল ॥ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে কাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় পিঠা উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করছে জাতীয় পিঠা উৎসব পরিষদ। নয়দিনের উৎসবের ১১তম আসরে থাকছে ৫০ স্টল। সে সঙ্গে প্রতিদিন বিকেলে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এবারের জাতীয় পিঠা উৎসবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও চাষী। রবিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যজন ড. এনামুল হক, আতাউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী, জাতীয় পিঠা উৎসব পরিষদের সভাপতি ম. হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ্্ আলম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার বিকেল চারটায় জাতীয় পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, নৃত্যগুরু আমানুল হক এবং সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এবারের উৎসব আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতিদিন বিকেল চারটায় উৎসবে পরিবেশিত হবে নাটক, আবৃত্তি, নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। রেবেকা সুলতানার সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ জাতীয় জাদুঘরের নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রবিবার সন্ধ্যায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে রেবেকা সুলতানার সঙ্গীতসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শিল্পী বিভিন্ন রকমের গান পরিবেশন করেন তার মধ্যে ছিল ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান’, ‘যবে তুলশি তলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায়’, ‘তুমি ডেকে লও সেই দেশে’ ও ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’।
×