ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা...

ভূমিসংলগ্ন লতাপাতার ছুঁয়ে দেয়া, আদর অনিন্দ্য সুন্দর ফুল

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

 ভূমিসংলগ্ন লতাপাতার ছুঁয়ে দেয়া, আদর অনিন্দ্য সুন্দর ফুল

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা,/বলছে ডেকে, ‘গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা...’ জসীমউদ্দীন লিখেছিলেন। পল্লী কবির বিখ্যাত কবিতায় যে দৃশ্যকল্প, এখন এই শীতকালে তা সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। গাঁয়ের আলপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা জড়িয়ে ধরছে সবুজ লতাপাতা। ভূমি সংলগ্ন লতাপাতার ছুঁয়ে দেয়া, আদর উপেক্ষা করা যায় না। একটি হতে পা ছাড়িয়ে নিতে না নিতেই অন্যটি জড়িয়ে ধরে। প্রতিটি গাছেই ঘন হয়ে ঝুলছে মটরশুঁটি। আর ফুলের সৌন্দর্যের কথা তো বলাইবাহুল্য। মটরশুঁটির অনিন্দ্য সুন্দর ফুল হয়। চোখ মেলে তাকালে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের নানা প্রান্তে মটরশুঁটির চাষ হয়। ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতেও দৃশ্যমান হচ্ছে এখন। কেরানীগঞ্জের কথাই ধরা যাক, গত সপ্তাহে জয়পাড়া নামক স্থানে সবুজ ক্ষেত দেখে থামতে হলো। এইটুকুন ফুলে আটকে গেল চোখ। মন কেমন যেন নেচে ওঠে। এমন দৃশ্য দেখেই হয়ত নজরুল লিখেছিলেন- ঐ ঘাসের ফুলে মটরশুঁটির ক্ষেতে/আমার এ-মন-মৌমাছি ভাই উঠেছে আজ মেতে...। শহুরে প্রজন্ম ফুলটি না দেখলেও, মটরশুঁটি দেখেছেন। কারণ গ্রামে চাষ হওয়া মটরশুঁটি সকাল হতেই চলে আসে ঢাকার বাজারে। মূলত শীতকালীন সবজি। শিমের সঙ্গে এর অল্পস্বল্প মিল আছে। বীজের জন্য বিখ্যাত। প্রতিটি মটরশুঁটির ওজন গড়ে ০.১ হতে ০.৩৬ গ্রাম পর্যন্ত হয়। শস্যদানা ব্যবহার করা হয় তরকারিতে। এতে স্বাদ বাড়ে। খেতে আরও সুস্বাদু হয়। মটরশুঁটি লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ। একবর্ষজীবী। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাষ হয়। বুনো মটরশুঁটি আছে মধ্যপ্রাচ্যে। নিওলিথিক যুগের সিরিয়া, তুরস্ক ও জর্ডানে হয় মটরশুঁটি। প্রাচীন মিসরের নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায় এর চাষ হতো। জর্জিয়াতে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দের দিকে এর ব্যবহার দেখা গেছে। পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষের হরপ্পা এলাকায় ২২৫০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মটরশুঁটির চাষ হতো। গাঙ্গেয় অববাহিকা এবং দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ নাগাদ মটরশুঁটির চাষ শুরু হয়। সুস্বাদু শস্যদানাটির পুষ্টিগুণ উল্লেখ করার মতো। গবেষণা বলছে, এক কাপ মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। আছে প্রোটিন। গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি প্রতিদিন ২ মিলিগ্রাম পলিফেলনসমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে তার পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। আর এক কাপ মটরশুঁটিতে অন্তত ১০ মিলিগ্রাম পলিফেলন থাকে। তাই এটি পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাত দারুণ কার্যকরী।
×