ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ফোরজি ইন্টারনেট সেবার জন্য আবেদন করল ৫ অপারেটর

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

অবশেষে ফোরজি ইন্টারনেট সেবার জন্য আবেদন করল ৫ অপারেটর

ফিরোজ মান্না ॥ অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত আধুনিক প্রযুক্তির চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) ইন্টারনেট সেবার জন্য পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর আবেদন করেছে। এখন মূল্যায়ন কমিটি আবেদনগুলো মূল্যায়ন করে ২৩ জানুয়ারি বিটিআরসির কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। বিটিআরসি পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে লাইসেন্স দেয়ার জন্য সুপারিশ আকারে ওই প্রতিবেদন পাঠাবে। আগামী মার্চের মধ্যে ফোরজি সেবা চালু করার টার্গেট রয়েছে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে। বিটিআরসি সূত্র বলেছে, ফোরজি সেবা দেয়ার জন্য টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম (সিটিসেল) লিমিটেড, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা লিমিটেড আবেদন জমা দিয়েছে। আর তরঙ্গ নিলামের জন্য বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি ও সিটিসেল আবেদন করেছে। দেশে মোবাইল সেবাদানকারী মোবাইল অপারেটররাই আবেদন করেছে। অন্য কোন অপারেটর ফোরজি সেবা দেয়ার জন্য আবেদন করেনি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তিন ধরনের তরঙ্গ বা স্পেক্ট্রাম নিলাম করবে। এগুলো হচ্ছে ২১০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ ও ৯০০ মেগাহার্টজ। বর্তমানে টুজি সেবা ৯০০ মেগাহার্টজ ও ১৮০০ মেগাহার্টজে দেয়া হচ্ছে। থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) সেবা দেয়ার জন্য ব্যবহার হচ্ছে ২১০০ মেগাহার্টজ। ২১০০ মেগাহার্টজে থ্রিজি সেবা দেয়া হয় সেখানে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দেয়া আছে। অর্থাৎ এই তরঙ্গে ফোরজি, টুজি সেবাও দিতে পারবে অপারেটররা। নিলামের জন্য ‘বেস্ট প্রাইস’ হিসেবে ২১০০ মেগাহার্টজে প্রতি মেগাহার্টজের জন্য ধরা হয়েছে ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টজের জন্য ধরা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আধুনিক ফোরজি সেবা মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া জন্য বিটিআরসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এই সেবা চালু হলে টেলিকমিউনিকেশন জগতে একটি নতুন দিনের সূচনা হবে। সিটিসেলের নিলামে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিটিআরসি জানায়, তারা বকেয়ার বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করেছে। তরঙ্গ গ্রহণের পর তাদের ফোরজি লাইসেন্স নিতে হবে। ফোরজি সেবার বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমান দুনিয়া ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যাচ্ছে। ভয়েসের মতো অবশ্যই ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে ভয়েস অনেকাংশে কমে যাবে। ডাটা আদান প্রদান হবে বেশি। সারা দুনিয়া চলছে, দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে না পারলে তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ব। ফোরজি সেবা আমাদের নিয়ে আসতেই হবে। সারাদেশে এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেষ্টা থাকবে সারা দেশেই ফোর জি সেবা নিশ্চিত করার। বর্তমানে দেশের এমন সব এলাকা রয়েছে যেখানে টুজি সেবাই ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। থ্রিজি সেবাও নেই অনেক এলাকায় তাহলে কি করে সম্ভব ফোরজি সেবা চালু করা। মন্ত্রী বলেন, ফোরজি সেবা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে। লাইসেন্সের গাইডলাইনে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। লাইসেন্সের গাইড লাইনে থ্রিজি সেবাও সারা দেশে দেয়ার কথা থাকলেও সেটা অপারেটররা করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে কিভাবে ফোরজি সেবা তারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবে। আধুনিক এই সেবা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আধুনিক এই সেবার সব সুযোগ সুবিধা মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে। দেখা যাক কি করা যায়। তবে সবার আগে ইন্টারনেটের দাম সব মানুষের নাগালে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারলে গ্রামের মানুষও সহজেই ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। ইন্টারনেট ছাড়া সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে না। মোবাইল ফানের ভয়েস কলের উচ্চসীমা ২ টাকা আর নিম্নসীমা ২৫ পয়সা যদি বেঁধে দেয়া সম্ভব হয়। তাহলে ইন্টারনেটের দামও বেঁধে দেয়া হবে। ইন্টারনেটের দাম অবশ্যই গ্রাহকের চাওয়ার মধ্যে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল অপারেটর সেবা দিচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মোবাইল সংখ্যা ১৪ কোটি। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা শতকরা ৯৫ ভাগ। বাকি ৫ ভাগ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন।
×