ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ন্যাম ভবন থেকে এমপির ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

ন্যাম ভবন থেকে এমপির ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সংসদ সদস্য ভবন (ন্যাম ভবন) থেকে সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে অনীক আজিজ স্বাক্ষরের (২৭) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ৫নং ন্যাম ভবনের ৫০৪ নম্বর ফ্ল্যাটের নিজ বেডরুমের ফ্যানের সঙ্গে ইন্টারনেটের তার গলায় পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ সেখান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠান। মৃত অনীক খুলনার সিটি পলিটেকনিক থেকে ইলেক্ট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে আইইএলটিএস করছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি পাঠশালায় ফটোগ্রাফির কোর্স করছিলেন তিনি। তার বাবা এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য। মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে এবারই প্রথম এমপি হয়েছেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ এ ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একই মত প্রকাশ করেছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। দুপুরে অনীকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ এম সেলিম রেজা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে যা লেখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করে তারও একই ধারণা হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন কী ছিল জানতে চাইলে এই চিকিৎসক জানান, লেখা ছিল গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা। আমার ফাইন্ডিংসেও তাই পাওয়া গেছে। শেরে বাংলা নগর থানার এসআই শফিকুর জানান, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার গলায় পেঁচানো অবস্থায় অনীকের দেহ শোবার ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। নিহতের পরিবার জানান, শনিবার রাতে ন্যাম ভবনের ওই বাসায় ছিলেন অনীক, তার বোন অদিতি আদৃতা সৃষ্টি ও তাদের পরিবারের এক ড্রাইভার, কাজের মেয়ে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। শনিবার সকালে সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও তার স্ত্রী নাসরীন খান লিপি সাতক্ষীরায় ছিলেন। রবিবার সকালেই তারা ঢাকায় ফেরেন। সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী মফিজুল হক জাহাঙ্গীর জানান, রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে যান। সকালে সবাই উঠলেও অনীক উঠছিল না। অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে লাশ পাওয়া যায়। মৃত অনীকের চাচা আবদুল্লাহ আল মর্তুজা জানান, আমরা ওর ল্যাপটপ, মোবাইল চেক করে দেখার চেষ্টা করছি। জানি না কীভাবে কী হলো। জাহাঙ্গীর জানান, দুপুর ১টায় ময়নাতদন্ত শেষে অনীকের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা সদরের পলাশপোলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তার দাফন হবে। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহের বন্ধু দৈনিক দক্ষিণের মশাল’র নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সভাপতি মিনাজুর রহমান জানান, এমপি মুস্তফা ভাই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে সবার বাসায় যেতেন। আমি অনীককে শিশুকাল থেকে চিনি। খুব সাদামাটা জীবন-যাপন করত। ওর ভেতরে কোন অহমিকা বোধ ছিল না। কাউকে কোন দিন কষ্ট দিয়ে কথা বলেনি। কখনও কারও সঙ্গে তর্ক করেনি। রাগ দেখায়নি। তিনি জানান, অনীকের শখ ছিল ছবি তোলা। নিপীড়িত মানুষের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করত। কোন নিপীড়ন বা অনিয়ম দেখলেই ছবি তুলে ফেসবুকে দিত। শ্রমিক ফেডারেশনের এই নেতা জানান, এমপির ছেলে হিসেবে কখনও কোন স্পেস দখল করেনি। এমনকি এমপির গাড়ি ব্যবহার করে দশ হাত দূরেও যায়নি। গণজাগরণ মঞ্চে এক মাসেরও বেশি সময় ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি প্রদর্শন করেছিল। প্রতিদিন রাত ৮টার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ছবিগুলো দেখাত সে। পজেটিভ বাংলাদেশ গড়ার জন্য সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে অনীক। ছোট বোন আদৃতা সৃষ্টি জানান, বাবা-মার সঙ্গে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ভাই অনীকের। ছেলে আর বাবা এক জায়াগায় বসে থাকলেও কেউ কখনও বুঝতে পারত তারা বাবা-ছেলে। বাবা কখন বাবার জায়গা থেকে কথা বলেনি। বন্ধুর মতো ইয়ার্কি ফাজলামি করেছে। আত্মহত্যার আগেও আমরা রাত ১১টা পর্যন্ত গল্প করেছি। এরপর কী হয়েছে আমি কিছুই বলতে পারব না। মৃতের আত্মীয়স্বজন জানান, পড়ালেখার চেয়ে মানুষের কল্যাণে সবসময় নিবেদিত ছিল অনীক। অনীকের ফেসবুক ঘেটে পারিবারিক কয়েকটি ছবিতে বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। এছাড়াও প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্যও ধারণ করে ফেসবুকে দিত সে। ছবি তোলার শখ থেকেই পাঠশালায় ফটোগ্রাফির কোর্স করেছিলেন তিনি। প্রেমই কি মৃত্যুর কারণ ॥ সরেজমিনে দেখা যায়, এমপির ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ। মরদেহ সুরতহালের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতলে নেয়া হয়েছে। সেখানেই গেছেন সবাই। তবে ফ্ল্যাটের নিচে দায়িত্বরত কর্মচারীরা বলাবলি করছিলেন, একটি মেয়ে প্রায়ই অনীকের কাছে আসত। মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ প্রেমই নাকি আত্মহত্যার কারণ। এ ব্যাপারে মৃতের পরিবারের লোকজন কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সাতক্ষীরা থেকে এক নারী এসেছিলেন এমপির সঙ্গে দেখা করতে। তিনি এসে শুনেন এমপির ছেলে আত্মহত্যা করেছে। ওই নারীও আফসোস করে জানান, তাহলে সেই প্রেমই কি কাল হলো?
×