ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় চীন জাপান ও ভারতকে যুক্ত করছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

 রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করবে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করবে বাংলাদেশ। আর রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় চীন, জাপান ও ভারতকে যুক্ত করছে মিয়ানমার। রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার নিরাপদ পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে মত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। আর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের ডেকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দুই পর্বে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কূটনীতিকদের সামনে আমরা তুলে ধরেছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আমরা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনকে (ইউএন এইচসিআর) যুক্ত করতে চাই। ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে একটি ড্রাফট ফাইনাল করেছে। আমরা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি এগ্রিমেন্ট করব। এই এগ্রিমেন্টের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে চাই। এ বিষয়ে মিয়ানমারের নীতিগত সমর্থন আমরা পেয়েছি। আপনারা জানেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই রেডক্রস যুক্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া মিয়ানমার ইতোমধ্যেই ভারতকে যুক্ত করেছে। এছাড়া তারা চীন ও জাপানকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আমরা ফরম চূড়ান্ত করেছি। সেই ফরমের মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হবে। রোহিঙ্গাদের কবেনাগাদ ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলছে। তবে নির্দিষ্টভাবে কোন তারিখ বলা সম্ভব নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট ইত্যাদি সম্পন্ন করেছে। এসব বিষয়ে কূটনীতিকদের আমরা বিস্তারিত জানিয়েছি। এদিকে ব্রিফিং থেকে বেরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, কোন রোহিঙ্গাকে জোর করে ফেরত পাঠানো যাবে না। তারা যেন স্বেচ্ছায় যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে তারা ফিরে যেতে আগ্রহী নয়। ব্রিফিং শেষে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে আমি বলতে চাই, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সঠিক পথেই এগুচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ভারত যুক্ত রয়েছে। রাখাইনে টেকসই উন্নয়ন চাই আমরা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়নে ভারত প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মিয়ানমারের সহযোগিতায় আমরা সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছি। ব্রিফিং শেষে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেক বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ও নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। সেখানে গিয়ে তারা যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ব্রিফিংয়ের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে ঢাকার ৫২টি মিশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ও ফিজিক্যাল এ্যারেজমেন্ট চুক্তি সই করেছে। নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহযোগিতা করে আসছে। এই সঙ্কট সমাধানে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান। রবিবার বিকেল চারটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই পর্বের ব্রিফিং শুরু হয়। প্রথমে ব্রিফ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ, তুরস্কসহ পশ্চিমা দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকদের। এরপর দ্বিতীয় পর্বে ব্রিফ করা হয় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর কূটনীতিকদের। প্রথম পর্বের ব্রিফিংয়ে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, জাপান, চীন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, তুরস্ক, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ভারত, মালদ্বীপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেডক্রসের প্রতিনিধিরাও এই ব্রিফিংয়ে যোগ দেন। শেষ পর্বের ব্রিফিংয়ে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মিশর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, পাকিস্তান, লিবিয়া, মরক্কো, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন।
×