ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তরমুজ চাষে সফলতার হাতছানি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

তরমুজ চাষে সফলতার হাতছানি

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি কৃষকের এ বছর ব্যাপক ক্ষতি হলেও উদ্যম ইচ্ছা শক্তি ও সংকল্পের কারণে অনেকেই সফল হয়েছেন। শিক্ষিত তরুণরা আধুনিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। বিশ্বে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত কৃষক আবুল খায়ের এলাকার একজন আদর্শ চাষী হয়ে উঠেছেন। তার খামারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ফল তরমুজ সুই ব্ল্যাক টু। তার খামারে বারোমাসি তরমুজ উৎপাদিত হয়। তরমুজ খেতে সুস্বাদু। দেখতে অনেক সুন্দর। থাইল্যান্ড হতে আমদানি করা নতুন জাতের এ ফল। তরমুজ জাতীয় এ ফল অল্প দিনেই বাজারজাত করা যায়। বিদেশী এই তরমুজগুলোর বাংলাদেশী নামও আছে। বাংলাদেশে সুইট ব্ল্যাক ২ তরমুজ জেসমিন নামে, এশিয়ান-২ তরমুজ বাংলালিংক নামে ও হলুদ তরমুজ নামে পরিচিত। মাধবপুরে বাণিজ্যিকভাবে এই ১ম চাষ হচ্ছে বিদেশী তরমুজ এবং বিশেষ করে হলুদ জাতের তরমুজটি। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশী তরমুজের চেয়ে বিদেশী তরমুজের দাম বেশি পাওয়া যায় ফলে ২ বছর পূর্বে গোপীনাথপুরের কৃষক আবুল খায়ের প্রায় ২ একর জমিতে থাইল্যান্ডি তরমুজ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন। উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। বারো মাস এ জাতের তরমুজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করেন। আবুল খায়েরের দেখাদেখি অনেকেই এখন এ জাতীয় তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তার চাষ করা তরমুজ জমি থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে তার ফলানো তরমুজ। খেতে সুস্বাদু উন্নত জাতের তরমুজের ক্রেতা অনেক বেশি। মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের আবদুল মন্নাফের ছেলে আবুল খায়ের। যখন সংসারের দায়িত্ব পরে তখন আবুল খায়ের নেমে পড়েন কৃষি কাজে। তিনি ২ বছর ধরে থাইল্যান্ডের সুইট ব্ল্যাক, এশিয়ান-২ তরমুজ চাষ করছেন তবে এই বছর প্রথম হলুদ তরমুজসহ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তরমুজ চাষ করছেন। অনেক বছর ধরে দেশীয় তরমুজ চাষ করে কিন্তু বিগত ২ বছর যাবত পরীক্ষামূলকভাবে এই বিদেশী তরমুজ চাষ করে। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে যে ফলন পেয়েছে তা বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছে। তাই এ বছর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ১৬০ শতক জমিতে এই বিদেশী তরমুজ চাষ করে। তাছাড়া দেশী তরমুজের তুলনায় এই তরমুজের ফলন সংগ্রহ করতে অনেক কম সময় লাগে এবং বেশি দামে বিক্রি করা যায়। এই বিদেশী তরমুজ চাষ করতে কোন সিজনের প্রয়োজন হয় না সারা বছর চাষ করা যায়। কৃষক আবুল খায়ের বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষে তরমুজের বীজ বপন করেছি এবং ডিসেম্বরের মধ্যভাগের দিকে ফসল তুলে ফেলব। ১৬০ শতক জমিতে এই তরমুজ চাষ করতে তাদের খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিদেশী এই তরমুজগুলো বিক্রি হয় ৯০ টাকা কেজি দরে। প্রতিটি তরমুজের ওজন সর্বোচ্চ ৩ কেজি হয়। এতে তার নিট লাভ হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তার এই তরমুজগুলো ঢাকা, সিলেট ও স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন। সরেজমিন কৃষক আবুল খায়েরের খামারে গিয়ে দেখা যায় খামারে কিছু জমি দুই রঙের তরমুজে ভরে গেছে। কোনটির উপরে সাদা আবার কোনটি কালো রঙের। চৌমুহনী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অর্ধেন্দু দেব অসীত বলেন, হাইব্রিড এই তরমুজ সারা বছর চাষ করা যায় এবং ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা য়ায়। যেখানে দেশী তরমুজের ফলন সংগ্রহ করতে ১২০ দিন সময় লাগে। এই তরমুজ এক চাষে ২ বার ফলন সংগ্রহ করা যায়। এই থাইল্যান্ডি তরমুজের দাম দেশী তরমুজের চেয়ে অনেক বেশি তাই কম সময়ে বেশি লাভ করতে পারেন চাষীরা। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল হক জানান, উপজেলার কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষক আবুল খায়ের। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই সবজি চাষে এগিয়ে এসেছে।
×