বাইরে কনকনে ঠা-া কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়েছে কপোতাক্ষ পারের ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি বাজার। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও রবিবার এখানে হাটবার। অন্য সকল পণ্য সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইকারি এবং খুচরা বেচাকেনা হয়। ব্যতিক্রম কেবল পান বাজার। দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা ও রাত পর্যন্ত কেবল এই হাটে আশপাশের গ্রাম থেকে পান আসতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতায় রাত বাড়ার পাশাপাশি হাট সরগরম হতে থাকে। কখনও রাত ৩টা কখনও বা রাত ৪টা থেকে পানের বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের খুব ব্যস্ততা। কলার পাতায় মোড়ানো গাদি গাদি পান সাজানো আছে পানহাটের সরু রাস্তার ওপর। শেষ রাতের এই পান হাটে প্রায় ১০০-১৫০ জন ক্রেতা-বিক্রেতা ৩০০-৪০০ ছাড়িয়ে যায় মাঝে মধ্যে। বাইরের বিক্রেতারা ঢাকা, খুলনা, ডুমুরিয়া, চুকনগর, তালা, জাতপুর, কয়রা, পাইকগাছা, গড়ইখালী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে আসে। পান ক্রয় করার পর সেগুলো পরিবহন করার ব্যবস্থা করতে সকালের আলো ফুটে যায়। পানহাটের সূত্র মতে জানা যায় আনুমানিক ১০-১২ বছর ধরে চলছে পানহাটের কার্যক্রম। প্রতিহাটে প্রায় ৪০ লাখ টাকার পান বিক্রি করে পান চাষীরা।
হাটের সময় : হাটের সময়টা অনেকটা ঋতুর ওপর নির্ভর করে বর্তমানে শীতের সময় রাত ৪টা থেকে শুরু করে সকাল ৬-৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে। অন্যদিকে গরমের সময় রাত ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলে পান বাজারে বেচাকেনা।
পান বিক্রেতারা : কপিলমুনি বাজারের পানহাটে পান বিক্রির জন্য জাতপুর, তালা, গোপালপুর, মোবারকপুর, বারইগড়া, চরবারাইপাড়া, ইসলাম কাটি, ঘোষনগর, গঙ্গারামপুর, কাশিমনগর, মাছিবাড়া রায়পুর থেকে তাদের বরজ থেকে পান তুলে সপ্তাহে দুই দিন এই হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে।
বিক্রীত পানের পরিমাণ : কপিলমুনির পানের হাটে প্রতি সপ্তাহের দুই হাটে প্রতি হাটের দিন ১ হাজার থেকে ১২ হাজার কুড়িপন বাজারে আসে যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
হাটের অসুবিধা : পানের হাটে বেশকিছু অসুবিধা রয়েছে যার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়ে। পানের ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কোন চাদনী থাকায় সরু রাস্তার ওপর পান বিক্রি করতে হয়। অন্যদিকে দূরের ক্রেতাগণের অপেক্ষা করার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সে কারণে দীর্ঘ সময় তাদের চা, পানের দোকানে অপেক্ষা করতে হয়। এ বিষয়ে পান বিক্রেতা উত্তম হোড়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের পান বিক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট চাদনী খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রতি বৃষ্টির সময় আমাদের কপিলমুনি বাজারের মেইন রাস্তার ওপর পান বিক্রি করতে হয়। কারণ বৃষ্টির সময় বাজারের মধ্যকার রাস্তাগুলো বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়।
পান চাষী শেখ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এলাকায় পান চাষের প্রধান অন্তরায় জলাবদ্ধতা, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া পান চাষীদের ক্ষতি হলে সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন প্রকার সহযোগিতা করা হয় না। আমরা ব্যক্তি মালিকানায় প্রতি বিঘা জমি ২০-৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমি লিজ নিয়ে পান চাষ করি।
কপিলমুনি তথা পাইকগাছা উপজেলার পান চাষ সম্পর্কে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএইসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাইকগাছা উপজেলার উত্তর অংশে ব্যাপক পান চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন পান হাটে পান চাষীদের পান বিক্রি হয়। উপজেলার ১৩৬ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়। পান বরজে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কপোতাক্ষ খননের কারণে গত ১ বছরে জলাবদ্ধতা নেই। আমাদের উপজেলায় সরকারীভাবে পান চাষীদের সহযোগিতার কোন প্রকল্প নেই। সরকারীভাবে পান চাষীদের সহযোগিতা করা গেলে পাইকগাছার উত্তর অংশ কপিলমুনি, হরিতালি গদাইপুরে ব্যাপক পান শ্রমিকের চাহিদা তৈরি করতে হবে। একজন পান শ্রমিক প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে প্রতিদিন উপার্জন করতে সক্ষম।