ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন!

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

ভার্চুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন!

বর্তমান বিশ্বে ছোট বড় মিলে ২৩০টি দেশের কারেন্সি হিসাবে ডলার, পাউন্ড, রুপি, রিয়াল, দিনার, টাকা, ইউরো, ইত্যাদির ন্যায় মোট ১৮০টি মুদ্রা প্রচলিত আছে, যা দৃশ্যমান। অথচ ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে ভার্চুয়াল মুদ্রার আওতায় অল্ট কয়েন, ইথেরিয়াম, বিট কয়েন, রিপল, ড্যাশ, লাইট কয়েন, মোনেরো, জিক্যাশ প্রভৃতি নামের অনেক অদৃশ্যমান সাংকেতিক মুদ্রা ইদানীং দিনে দিনে জায়গা দখল করে চলেছে। অবশ্য এর মধ্যে বিট কয়েন যেভাবে জ্যামিতিক গতিতে বাজার দখল করে চলেছে, অন্য ভার্চুয়াল সাংকেতিক মুদ্রা সেভাবে অতখানি পারেনি। আসলে বিট কয়েন কোন মুদ্রা নয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের সফ্্টওয়্যার। আর এই সফ্্টওয়্যারের প্রণেতা তথা কারিগর হলেনÑ শতোশি নাকামাতো। তবে শতোশি নাকামাতোকে ঘিরে অনেক ইতি-নেতিবাচক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কি একজন মানুষ, না গোষ্ঠী? অবশ্য অনেকে দাবি করেন যে তিনি একজন জাপানি মানুষ, তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৫ এপ্রিলে। আবার অনেকের ধারণা নাকামোতো কোন ব্যক্তি নন; বরং আমেরিকা এবং ইউরোপের সংশ্লিষ্ট কিছু চৌকষ ব্যক্তিবর্গ মিলে তৈরি করেছে এই বিট কয়েন। এদিকে বিট কয়েন নাম দেয়ার পেছনে এই বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে চার্লস ব্যাবেজ প্রথমে কম্পিউটার তৈরি করার প্রাক্কালে যে ভাষাটি ভিত্তি করেছিলেন, তা হলো বাইনারি পদ্ধতি (০ এবং ১), যার প্রবক্তা ছিলেন জার্মান দার্শনিক এবং অঙ্ক বিশারদ গটফ্রিড উইলহেম লিবনিজ। যা হোক, এই বিট (ইর.) হলো বাইনারি ডিজিট (ইরহধৎু ফরমরঃ); আর এই বিট ভিত্তি করেই কম্পিউটারের সফ্্টওয়্যার তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে অসংখ্য বিট আবশ্যক হয়ে থাকে; যেমন- ৮ ইরঃং = ১ ইুঃব এবং তৎপর এর বিস্তৃতি কিলোবাইট থেকে জিয়োপবাইট পর্যন্ত। যা হোক, নাকামোতো ব্যক্তিই হোক, আর গোষ্ঠীই হোক। যেহেতু ডিজিটাল কারেন্সি হিসাবে লেনদেনের জন্য ব্যবহার হয়। সেহেতু এটা মাথায় রেখে হয়ত বিট কয়েন নাম দেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, এ বিষয়ে ২০০৮ সালে নাগামোতো একটি নাতিদীর্ঘ ব্যবহারিক প্রবন্ধ লেখেন। এই সূত্র ধরে ২০০৯ সালে বিট কয়েনের মাধ্যম লেনদেন শুরু হয়। আর এ লেনদেন পিয়ার টু পিয়ারভিত্তিক বন্ধু বান্ধবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের দিকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এর লেনদেন শুরু হয়। যতদূর জানা যায়, প্রথম লেনদেনটি নাকি পিজা কেনার মাধ্যমেই আরম্ভ হয়। বস্তুত অনলাইনে কেনাবেচা তথা লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হয় এই সফ্্টওয়্যার সংবলিত মুদ্রা তথা বিট কয়েন। আর একটা বিষয় এই মর্মে বলতে হচ্ছে যে, অনেকে হয়ত মনে করতে পারেন যে অনলাইন বা নেট ছাড়াও এই মুদ্রা ব্যবহার করা যাবে, তা কিন্তু নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের দেশের ১ টাকা সমান যেমন ১০০ পয়সা। ঠিক তেমনই ১ বিট কয়েন মানে ১০০০ মিলি বিট কয়েন। আর একইভাবে এক মিলি বিট কয়েন সমান ১০০০০০ শতোশি। একজন অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে এই মর্মে প্রশ্ন করতে পারেন যে, সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার কয়েন ও নোট ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে থাকে। তাই বিট কয়েনের ব্যাপারে এ ধরনের কোন কার্যক্রম হয় কি না? এক্ষেত্রে জবাব হলো যেহেতু বিট কয়েন নেটে ব্যবহার করা হয়; সেহেতু ছাপানোর কোন প্রশ্নই উঠে না। তবে এই মুদ্রা মাইনিং করা হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মাইনিং আবার কি? এ তো আর খনি নয়? এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট সময়ের (ধরুন, দশ মিনিট) মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কম্পিউটারে সংঘটিত বিট কয়েনের লেনদেন যাচাই-বাছাই পূর্বক সংগ্রহ করে একটি ব্লক তৈরি করা হয়। তৎপর ব্লকগুলোর সমুদয় হিসাব যে নেট খাতায় (লেজার) লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে ব্লক চেইন বলে অভিহিত করা হয়। আর এই ব্লক চেইনের সুবাদে জানা যায় বিট কয়েন কোন হিসাব থেকে কোন হিসাবে গিয়েছে। যদি কেউ বদলায় বা পরিবর্তন করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ ধরা পড়ে যাবে। এভাবে লেনদেনের সামগ্রিক কর্মক-কে মাইনিং বলা হয়। এক্ষেত্রে যাঁরা সংশ্লিষ্ট থাকেন, তাদের মাইনার বলে। আর যাচাই-বাছাই করে ব্লক তৈরির জন্য পুরস্কার হিসেবে মাইনারদের ভাগ্যে জুটে বিট কয়েন। এদিকে বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার আবশ্যক। তাছাড়া বিদ্যুত খরচও বেশি। দুই. পূর্বেই বলেছি, বিটকয়েন একটি সাংকেতিক ভার্চুয়াল মুদ্রা। এটি চোখে দেখা যায় না এবং হাতেও স্পর্শ করা যায় না। কেবল ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ ব্যবসায় এর লেনদেন হয় কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে। কেউ যদি এই ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন করতে আগ্রহী হন। তাহলে অত্র বিট কয়েন ব্যবস্থায় ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক ই-কারেন্সি লেনদেনের আওতায় কয়েন বেসের মাধ্যমে হিসাব খুলতে হয়। অবশ্য হিসাব খোলার সময় উদ্ভূত কিছু গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয়। আর হিসাব খোলার অব্যবহিত পর গ্রাহকের স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার সফ্্টওয়্যার ইন্সটল করে নিলেই এই বিট কয়েনের হিসাব বা এ্যাকাউন্ট সহজে পরিচালনা করা যায়। এক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড কিংবা ক্রেডিট কার্ডের দ্বারা কয়েন বেসের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, বিট কয়েন কেনা যতটা সহজ, বিক্রি করা অতটা নয়। সাধারণত ক্রয় করতে চাইলে এর জন্য প্রথম খুলতে হবে বিট কয়েন ওয়ালেট। এই অনলাইন ওয়ালেট সংরক্ষিত থাকে নেটের মাধ্যমে তৈরি ভল্ট বা লকারে। আর লেনদেন করতে আগ্রহী হলে, ওই জমাকৃত বিট কয়েন থেকে প্রেরণ করতে হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত একবার চুরি হয়ে গেলে কারও ক্ষমতা নেই যে খুঁজে বের করবে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা যেমন পাস বই দেখে বা নিট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কত টাকা ব্যালেন্স আছে, তা জানতে পারি। কিন্তু বিট কয়েনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যতটুকু জানা যায়; তা হলো ধরুন, ঝ ব্যক্তি জ ব্যক্তিকে ১০ বিট কয়েন প্রেরণ করেছেন, সেক্ষেত্রে লেনদেন শেষে ঝ-এর এ্যাকাউন্ট প্রদর্শন করবে ১০ বিট কয়েন কমেছে এবং জ-এর এ্যাকাউন্টে ১০ বিট কয়েন বেড়েছে। আর এটি প্রত্যক্ষ করে প্রতীয়মান হবে যে বিট কয়েন হাতবদল হয়েছে। তবে আশ্চর্য বিষয় হলো যে, এ্যাকাউন্ট জানা গেলেও লেনদেনকারীর পরিচয় জানা সম্ভব নয়। আর এই ভার্চুয়াল মুদ্রার প্লাস পয়েন্ট হলো অযথা দৃশ্যমান মুদ্রা বয়ে বেড়ানোর মতো বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তাই এটি ধীরে ধীরে নব্য অর্থনীতির ধারক ও বাহক হয়ে উঠছে। আর সবকিছু বিবেচনা করে প্রযুক্তিবিদ এবং কতিপয় অর্থনীতিবিদ আগত প্রজন্মের জন্য এই মুদ্রা ব্যবস্থাকে অর্থনীতির কার্যকরী রোডম্যাপ ও পথ-প্রদর্শক হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের কথা প্রণিধানযোগ্য। কেননা তিনি বলেন যে দৃশ্যমান মুদ্রাব্যবস্থার তুলনায় অদৃশ্যমান তথা ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবস্থা তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য। কারণ এক্ষেত্রে সন্ত্রাস বা অর্থ পাচারের কোন সম্পর্ক নেই। আগামীতে হয়ত এটাই বিনিয়োগের বড় মাধ্যমে বা খাত হতে পারে। এতদপ্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, বিট কয়েন ২০০৮-২০০৯ সালে জন্ম হলেও আট বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৭ সালে এর মূল্য আলাউদ্দিনের আশ্চার্য প্রদীপের ন্যায় হু হু করে বেড়ে যায়। উল্লেখ্য, জন্ম লগনে একটি বিট কয়েনের দাম ছিল মাত্র ২৫ সেন্ট। তৎপর বেড়ে বেড়ে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে একটি বিট কয়েনের দাম দাঁড়ায় এক হাজার ডলার। আর সেই বছরের (২০১৭) মাঝামাঝিতে দশ হাজার হয় এবং একই বছরের শেষে বিশ হাজার ডলার দাঁড়ায়। এই ভার্চুয়াল মুদ্রা ঘিরে চারদিকে হুলস্থূল পড়ে যায়। এ অবস্থা অবলোকন করে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির নীতি-নির্ধারকদের চোখ চরক গাছ হয়ে যায় এবং ঝাঁনু ঝাঁনু অর্থনীতিবিদরাও নড়ে চড়ে বসেন। কারণ এক বছরের মধ্যে একটি বিট কয়েনের মূল্য ১৫৫০ শতাংশ বেড়ে যায়, যা সবাইকে হতবাক করে তুলে। এই গ্যালোপিং বৃদ্ধির কারণে কয়েন বিশারদরা একে ডিজিট্যাল গোল্ড হিসেবে উপর তলার মর্যাদা দেন। আর এসব দেখে ফান্ড ম্যানেজাররা চুপচাপ বসে না থেকে এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে শুরু করেছেন। যদিও এই বিট কয়েনের উৎস এখনও অস্পষ্ট এবং ব্যবহারও লিমিটেড। তথাপিও এই মুদ্রাটি সারা বিশ্বে যেমন তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, অতীতে কোন মুদ্রার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়নি। ওয়েস্টান ওয়ার্ল্ড এই অদৃশ্যমান মুদ্রাকে নিয়ে অতি মাত্রায় মাতামাতির কারণে প্রকারান্তরে পপুলার করে তুলেছে। যদিও ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রায় দেশে এই মুদ্রা জনপ্রিয়। কিন্তু এশিয়ায় তেমনটি নয়; বরং এর লেনদেন এখনও অবৈধ। চীন, রাশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, সুইডেনসহ আরও বেশকিছু দেশে এর নামগন্ধও শুনতে পারে না। অবশ্য এর পেছনে কারণ হলো গ্রাহকের পরিচয় গোপন রাখা, হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা, সাইবার ক্রাইম, দরপতন এবং সর্বোপরি ব্যাংক বা আর্থিক সংস্থার কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মুদ্রা বাজারে (গড়হবু গধৎশবঃ) আসার যোগ্যতা রাখে না। তবে ওই দেশগুলোতে এই ভার্চুয়াল মানির যে লেনদেন হচ্ছে না, তা জোর গলায় বলা যাবে না। কারণ গা ঢাকা দিয়ে বা গোপনে লেনদেন যে হচ্ছে, তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন বিট কয়েনের মাধ্যমে লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তাছাড়া এই ভার্চুয়াল মুদ্রার নেতিবাচক বিষয়াদি চিন্তা-ভাবনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিট কয়েনকে অবৈধ আখ্যায়িত করেছে এবং এ ধরনের লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’ ২০১২ আওতায় মধ্য গণ্য করেছে। আসলে বিট কয়েন সহ অন্যান্য ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে বিশ্ববাসী বলতে গেলে গোলক ধাঁধার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারীরা ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। তাঁদের মতে অতি লোভে আম-ছালা দুটোই হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। এরই বরাত দিয়ে অনেকে বলছেন যে প্রযুক্তিবিদ ও বিল গেটসের কথায় কান না দেয়ার জন্য। নোবেল বিজয়ী জোসেফ স্টিগলিজ তো চরম ক্ষ্যাপা। তিনি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভার্চুয়াল মুদ্রা থেকে শত হাত দূরে থাকতে বলেছেন। অথচ ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশই এই ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছে। স্বয়ং ব্রিটেন ডিজিট্যাল মুদ্রার মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে। আর এই কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ভেনিজুয়েলার খোদ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার পদক্ষেপ হিসেবে নতুন একটি ভার্চুয়াল মুদ্রার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। জাপানে বলতে গেলে একই চিত্র। দেশটির এক সংস্থা কর্মীদের বিট কয়েনের মাধ্যমে বেতনের একাংশ দেয়ার কথা বলেছে। একইভাবে সম্প্রতি শিকাগোর আগাম পণ্য বাজারে চালু হয়েছে এই ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেন। সত্যি কথা বলতে কি, এ বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট যেমন নানা রকম সংবাদসহ তথ্যাদি আদান প্রদান সহজ করে তুলেছে। ঠিক তেমনই ব্লক চেইন আর্থিক আদান-প্রদানের পথ সুগম করে তোলার বিষয়টি খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। বাংলাদেশ বর্তমানে টেক অব স্টেজে আছে। তাছাড়া জনসংখ্যার সুবর্ণ ধাপ চলমান। সেহেতু ভার্চুয়াল মানির বিষয়টি উড়িয়ে না দিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে টিকে থাকার ভীত রচনাকল্পে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ ব্যাপারেসম্যক ধারণা দেয়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ তলিয়ে দেখা আবশ্যক বলে মনে করি। এক্ষেত্রে ব্লক চেইন প্রযুক্তিভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রার একটি সেল গঠন করা যেতে পারে। এখন হয়ত এই সংকেতিক মুদ্রার ইম্প্যাক্ট পুরোপুরি বুঝা যাচ্ছে না। হয়ত এমন একদিন আসতে পারে, যখন এটা অবিচ্ছদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। আর একটা কথা, আমরা বুদ্ধিমান বলে এই প্রযুক্তিকে দূর দূর করছি। আর ইউরোপ-আমেরিকার লোক অতি মাত্রায় ফার্স্ট বলে এটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, তা ভাবা বোধ হয় ঠিক হবে না। এটা বাস্তব কথা যে, অগ্রসরমান প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে অধিক কিউমুলেটিভ জটপাকা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে প্রতীয়মান হয়। এখন যে ভার্চুয়াল মানিকে ঘিরে সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়ত সেটা প্রশমিত হতে পারে। পরিশেষে এই মর্মে একটি কথা বলতে চাই যে, এই ছোট নিবন্ধে স্বল্পপরিসরে বিট কয়েনসহ ভার্চুয়াল মুদ্রার ভাল-মন্দ যতকিঞ্চিৎ আলোচনা করা হলেও এক্ষেত্রে সর্বদা একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে এই ভার্চুয়াল মুদ্রার পেছনে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যমান, তা শিশু অবস্থায় আছে; যা বর্তমান সভ্যতার উৎকর্ষতার অন্যতম একটি সারথী। তাই এটি মাথা থেকে পুরোপুরি ঝেরে ফেলা দেয়া বোধ হয় সমীচীন হবে না বরং ভেবে-চিন্তে এবং ধীরে সুস্থে পা ফেলা অধিকতর যৌক্তিক বলে মনে করি।
×