ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গবর্নরকে এমডিদের চিঠি

জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধে ব্যাংক খাতের ঋণ ও আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হবে। এতে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। গবর্নরের কাছে লেখা এবিবির চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা উদ্বিগ্ন যে, নিকট ভবিষ্যতে এ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশের আশপাশে নামিয়ে আনা হবে। যদি তাই হয়, তবে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের প্রয়োজন হবে। চিঠিতে এমডিরা আরও জানায়, আমরা উদ্বিগ্ন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এডিআর নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদ হার বাড়বে। কারণ, বাড়তি আমানত সংগ্রহের জন্যই ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন আমানত আসবে তাও নয়। শুধু এক ব্যাংকের আমানত আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে যে ব্যাংক আমানতের সুদ বাড়াবে, বিদ্যমান আমানতকারীরা অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে সেই ব্যাংকে খাটাবে। আবার আমানতের সুদ বাড়লে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হারও বাড়িয়ে দেবে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করবে। গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করাই ব্যাংকের প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে দেশের সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। তবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ বেসরকারী ব্যাংকেরই এডি রেশিও ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারী ব্যাংকে সৃষ্টি হয়েছে তারল্য বা নগদ টাকার সঙ্কট। এ পরিস্থিতিতে গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আগ্রাসী বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেন গবর্নর। প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো যে হারে ঋণ বিতরণ করেছে, সে হারে আমানত সংগ্রহ করতে না পাড়ায় এডি রেশিও বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ঋণ যে হারে গেছে, সে হারে আমানত আসেনি। ফলে ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ৮৫ শতাংশের বেশি এডি রেশিও কোন ব্যাংকের থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে গবর্নরকে লেখা এবিবি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কিছু সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে চাইলে ব্যাংকগুলোর চলমান ঋণ বিতরণ চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। বিশেষ করে চলতি মূলধন ঋণ, গ্রাহকের পক্ষে আমদানি বিলের অর্থ পরিশোধ ও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে গ্রাহক তথা রফতানিকারক, এসএমই ও করপোরেট গ্রাহকদের তহবিল সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তখন এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া ব্যাংকগুলোর পক্ষে কঠিন হবে। বিশেষ করে নির্বাচনী বছরে তা আরও কঠিন হবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে যদি পরিবর্তিত এডিআর নীতিমালা বাস্তবায়ন করতেই হয়, তবে কমপক্ষে একবছর সময় দিয়ে সেটা বাস্তবায়নে যাওয়া উচিত। এবিবি’র চিঠিতে বলা হয়, বিকল্পভাবে এডি রেশিও’র বিষয়টি ক্যামেলস রেটিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
×