ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রাহ্ম আন্দোলন দ্রোহেরই অংশ॥ মুনতাসীর মামুন

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

ব্রাহ্ম আন্দোলন দ্রোহেরই অংশ॥ মুনতাসীর মামুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমার যা বলার ‘উনিশ শতকে পূর্ব বঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন’ বইটিতে বলা হয়ে গেছে। আজ যেখানে বসে কথা বলছি এই এলাকাটা ছিল পূর্ব বাংলার সবচেয়ে বড় মননশীল জায়গা। এখানে সাধারণের টাকায় পাবলিক হল হয়। সেখানে প্রথম ‘নীল দর্পণ’ নাটক অভিনীত হয়। সৌরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত এখানে এসে গেছেন। এরপরেই হয়ে উঠল জগন্নাথ স্কুল এবং কলেজ। ব্রাহ্ম আন্দোলন নিয়ে লেখার ইচ্ছা আমার জেগে ছিল ৪০ বছর আগে। এই ৪০ বছর ধরে আমি বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করি। মূলত ব্রাহ্ম আন্দোলন নিয়ে যতগুলো বই লেখা হয়েছে, তাতে দেখা যায় কলকাতা কেন্দ্রিক। পূর্ব বঙ্গ বেশিরভাগ অনুপস্থিত। ১৯৪৬ সাল থেকে যদি ধরি, সমান্তরালে পূর্ব বঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন গড়ে উঠেছে ১৯শ’ সাল পর্যন্ত। এটা গবেষণার কারণ হচ্ছে-এই অজানা ইতিহাসকে তুলে ধরা। যার ফলশ্রুতিতে বাংলার ইতিহাস সচেতনতায় একটা ভারসাম্য আসে। বাংলার ইতিহাস শুধুমাত্র কলকাতা বা মুর্শিদাবাদের ইতিহাস নয়। বাংলার ইতিহাসে এই ভূ-খ-েরও ইতিহাস যোগ করতে হবে। ‘ব্রাহ্ম আন্দোলনের ইতিহাস’ পড়লে আপনারা দেখবেন যে অল্প কিছু লোক কিভাবে সমাজের চিত্রটাকে বদলে দিয়েছিল। তারা সাকসেসফুলও হয়েছিল তাদের সাহসের জোরে। আমি মনেকরি পূর্ববঙ্গের ইতিহাস দ্রোহের। আমাকে যদি কেউ বলে আমাদের ঐতিহ্য কি? আমি বলব, দ্রোহ। ব্রাহ্ম আন্দোলন দ্রোহেরই অংশ’- নিজের বই সম্পর্কে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ঢাকার ব্রাহ্ম সমাজ ভবনে শনিবার বিকেলে ‘উনিশ শতকে পূর্ব বঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন’ বইটি সম্পর্কে আলোচনা ও আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, কবি ও লেখক পিয়াস মজিদ এবং অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হক। ব্রাহ্ম সমাজ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনেক তত্থ্যের ভিত্তিতে মুনতাসীর মামুন বইটি লিখেছেন। তার লেখার ভেতর একটা প্যাসন আছে। কঠিন কথাগুলোকে খুব সহজভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন তিনি। এ বইটিতেও তাই করেছেন। সাহিত্যের জগতে বইটি একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে বক্তারা বলেন, এ দেশের ইতিহাসের মোড়কে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের আন্দোলন। সেই কথাটি প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন লেখক এ বইটিতে। সে আন্দোলনটি ধীরে ধীরে যেভাবে অগ্রসর ও প্রসার লাভ করেছিল, তার সবই এতে আছে। এখানেই লেখক মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। বইটি একুশ শতকের জন্যও খুবই গুরুত্ববহন করে। বইটি শুধুমাত্র ব্রাহ্ম সমাজেরই ইতিহাস নয়, সামাজ সংস্কারেরও ইতিহাস। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটি সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্রাহ্ম সমাজের সাধারণ সম্পাদক রণবীর পাল। বইটি প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। উৎসর্গ করা হয়েছে ব্রজসুন্দর মিত্র, শ্রীনাথ চন্দ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়. নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়, গিরিশ চন্দ্র মজুমদার, কালী নারায়ন গুপ্তের মতো ব্রাহ্ম কর্মিদের যারা পূর্ববঙ্গের জাগরনে ভূমিকা রেখেছিলেন।
×