ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে হত্যা ॥ গ্রেফতার চার

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে হত্যা ॥ গ্রেফতার চার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তার চেয়েও বেশি আলোচনার সৃষ্টি করেছে, এ ঘটনায় দায়েরকৃত খুনের মামলায় বরের আসামি হওয়ার ঘটনা। যা মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এলাকায় মুখে মুখে ফিরছে ঘটনাটি। বিয়ের আগেই হত্যা মামলার আসামি হওয়ায়, বিয়ে না হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। বর বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রেফতারে হন্যে হয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চার জনের মধ্যে দুই জনকে একদিনের রিমান্ডে আর অপর দুইজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। বৃহস্পতিবার ঘটনার সূত্রপাত। ঘটনাটি ঘটে ওয়ারী থানাধীন আর কে মিশন রোডের ৪৪ নম্বর বাড়িতে। বাড়িটির নয়তলায় স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন নিহত নাজমুল হক (৬৫)। তিনি সর্বশেষ ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অডিট কালেক্টর হিসেবে অবসরে যান। বাইপাস সার্জারির রোগী ছিলেন। ওইদিন বাসার ছাদে ফ্ল্যাট মালিকদের কমিউনিটি হলে রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। বর হৃদয় রহমান বাড়িটির ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেনের ভাগ্নে। বরের বাসা মতিঝিল থানাধীন গোপীবাগের তৃতীয় লেনে। নিহতের মেয়ে নাফিসা হক জানান, রাতে এগারো তলায় চলা অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান বাজাতে থাকলে তার পিতার খুব সমস্যা হচ্ছিল। তারা বিষয়টি ফ্ল্যাট মালিক কর্তৃপক্ষকে জানান। তারা এর কোন প্রতিকার করেনি। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে বর পক্ষের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। নিহতের ছেলের বৌ সাদিয়া নাসরিন জানান, বাড়িটির পঞ্চম তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন আলতাফ হোসেন। চার বছর আগে তার শ্বশুর নাজমুলের বাইপাস সার্জারি হয়। এ নিয়েই মূলত ঘটনা। ছাদে গিয়ে শব্দ কমাতে বলার সূত্র ধরেই মারধরের ঘটনাটি ঘটে। মারধরে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুরকে। সেখানেই শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহতের ছেলে নাসিমুল হক জানান, শুক্রবার সকালে বরপক্ষের লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। নিচে গেলে তারা তাকে মারধর করে। পিতা তাকে মারের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। এ সময় বর পক্ষের লোকজন তার পিতাকেও মারধর করে। এতে তিনি পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওয়ারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় সাত জনকে এজাহার নামীয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শুক্রবারই মামলার একনম্বর আসামি বরের মামা আলতাফ হোসেন (৬৫), তার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৪১), মেয়ে রাইয়ান হাসনিন (৩১) ও তার স্বামী মির্জা জাহিদ হাসানকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। বর মামলার ৩ নম্বর আসামি। অপর দুই আসামি হচ্ছে হোসনে আরা ও জিনাত। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন-উর-রশীদ জানান, বর হৃদয় এ মামলার তিন নম্বর আসামি। তাকেসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই আসামিরা পেটানোর কারণে অসুস্থ হয়ে নাজমুল হকের মৃত্যু হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আসামিদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন ও মীর্জা জাহিদ হাসানকে এক দিনের করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। নির্ভরযোগ্য পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এমন ঘটনার পর চরম বিপাকে পড়েছে মেয়ের পরিবার। প্রাথমিকভাবে মেয়ের পরিবার ওই ছেলের সঙ্গে কনের বিয়ে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর রীতিমতো পলাতক। বরের পক্ষের অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। এ ঘটনায় নাজমুল হককে মারধরের ঘটনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমতো দু’টানায় পড়েছে কনের পরিবার। কনের উপর বিষয়টি নির্ভর করছে। আগাম জামিন ব্যতীত বা মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, যে বর বিয়ের আগেই মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে, এমন বরের সঙ্গে কনে পক্ষের লোকজন মেয়ের বিয়ে দিতে নারাজ। পরিবারের এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে অনেকটাই একমত কনেও। কারণ বিয়ে হওয়ার পর থেকেই আদালতে হাজিরা থেকে শুরু করে, নানা ঝামেলা পোহাতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে নারাজ কনে পক্ষ। এজন্য কনে পক্ষ থানা পুলিশ ও বরের পক্ষের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বলে পুলিশ বলছে।
×