ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদন আর কেনাকাটায় উৎসবমুখর বাণিজ্যমেলা

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

 বিনোদন আর কেনাকাটায় উৎসবমুখর বাণিজ্যমেলা

ওয়াজেদ হীরা ॥ সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ রাজধানীতে। অনেকটাই কমে এসেছে শীতের প্রকোপও। হালকা শীতের আমেজে উৎসবের রং পেল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। শুক্রবারের মতোই শনিবারও লোকে লোকারণ্য মেলাস্থল। বিনোদন আর কেনাকাটায় প্রাণের মেলা হয়ে উঠল উৎসবমুখর। এবারের বাণিজ্যমেলা শুরুর পর থেকেই প্রতিটি ছুটির দিনেই ছিল বেশ শীত। দর্শনার্থীদের শীতের ভারি পোশাক পরে মেলায় আসতে হয়েছে। তবে এই তৃতীয় সপ্তাহে শীত অনেকটাই কম। শুক্রবারের মতো শনিবারও রোদের ঝিলিক। হালকা শীতের কাপড় জড়িয়ে সকাল থেকেই মেলামুখী হয় প্রচুর দর্শনার্থী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। আর বিকেলে তো পা ফেলারও জায়গা নেই মেলায়। তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ সবাই মিলেছে মেলায়। আর সবাই মেতেছে উৎসবেও। কেউ কিনছেন তো কেউ কিনে দিতে আসছেন। কেউ আবার শুধুই মেলা ঘুরে দেখার জন্য এসেছেন। কথা হয় চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবু তাহেরের সঙ্গে। রাজধানীতে একটা কাজে এসে অবসর সময় পেয়ে মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এ মেলার কথা শুনি। এবার সময় মতো একটা কাজ ছিল আবার মেলাও দেখলাম। আবু তাহেরের মতো রাজধানীর অনেক দূরের বাসিন্দারাও এই মেলায় আসেন। এছাড়াও রাজধানীর আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে প্রতিনিয়তই দর্শনার্থী আসেন মেলায়। আর ছুটির দিনগুলোতে সেই দর্শনার্থীদের চাপও একটু বেশি থাকে। এখন প্রতিটি স্টলেই উপচে পড়া ভিড়। কারোরই সময় নেই কথা বলার। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যে প্রচুর ‘ডিসকাউন্টের অফার’ থাকার কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। কোন কোন পণ্যে ১০ থেকে ৬০ শতাংশ মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে। আতাউর রহমান নামের ক্রেতা জানান, আমরা মেলায় আসি ঘুরতে। তবে অনেক পণ্যে নানা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে যা মেলার বাইরে গেলেই দাম বেশি। তাই কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করছি। একাধিক বিক্রেতার মতে, মেলায় পণ্যের পরিচিতির একটা বিষয় থাকে আর বিক্রয়ও আছে। দুই মিলিয়ে একটু ছাড় দেয়া হয় ক্রেতাদের জন্যই। এছাড়াও বিক্রেতারা জানান, দামে যদি ছাড় নাও দেয়া হয় তারপরও ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে। মেলায় গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালির পাশাপাশি প্রেসার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার, ওভেন, রাইস কুকার, ইস্ত্রি, ইন্ডাকশন চুলা, ফ্যানসহ নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনে নগদ ছাড়সহ বিভিন্ন পুরস্কার জিতে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এছাড়াও পণ্যে নগদ ছাড়তো থাকছেই। ফলে মেলা থেকে পণ্য কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহেরও শেষ নেই। মেলায় আসা ফাহমিদা হোসেন বলেন, ঘরের জন্য অনেক কিছুই প্রয়োজন। মেলায় একটি জায়গাই অনেক পণ্য পাওয়া যায়। এটাই মেলার একটা বড় বৈশিষ্ট আর আমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য। এদিকে, বেশি ভিড় ছিল গৃহস্থালি পণ্য এবং খাবারের দোকানগুলোতেও। তারুণ্যের ভিড় দেখা গেছে মোবাইল ফোন, ব্লেজার ও কটির স্টলগুলোতে। সে তুলনায় ফাঁকা ছিল হোম এ্যাপ্লায়েন্স; যেমন টিভি, ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এসি ও ফার্নিচারের স্টলগুলোতে। বরাবরের মতো তরুণীদের ভিড় ছিল গহনার দোকানগুলোতে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসও বাদ যায়নি তরুণীদের ভিড় থেকে। এদিকে, মেলায় ১৯তম দিন শুক্রবার এক লাখের ওপরে দর্শনার্থী প্রবেশ করেছিল বলে জানা গেছে। তবে একদিন পর শনিবার কিছুটা কমে গেছে দর্শনার্থী। তবে শনিবারের ছুটির দিন হিসেবে যথেষ্ট। আগামী শুক্র ও শনিবারও রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী হবে এমন আশা মেলা মাঠের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের। এদিকে, আয়োজকরা আশা প্রকাশ করে বলেন, মেলার সময় বৃদ্ধি না হলে আর মাত্র দুটি ছুটির দিন পাওয়া যাবে। আগামী দুটি ছুটির দিনেও ক্রেতা ও দর্শনার্থী আরও বেশি আসবে বলে মনে করছেন তারা। ১০০টি সিসিটিভির মাধ্যমে পুরো মেলা তদারকি করা হয়। আর নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব-পুলিশ-আনসারতো আছেই। বিভিন্ন অভিযোগ ও তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য মেলায় প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত আছেন। দেশী বিদেশী বিভিন্ন ক্রেতাদের পণ্য ও সেবার সঙ্গে পরিচিত করতে বাংলাদেশ ছাড়াও বাণিজ্য মেলায় ১৭টি দেশ অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই মেলা চলছে।
×