ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেড় বছরে ২৮ অভিযান জোরদার হবে

জঙ্গী দমনে পুলিশের অভিযান এ বছর আরও জোরদার হবে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

জঙ্গী দমনে পুলিশের অভিযান এ বছর আরও জোরদার হবে

শংকর কুমার দে ॥ নতুন বছর ২০১৮ সালে জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রম আরও ব্যাপক, কঠোর ও শক্তিশালী হবে বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দাবি। রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর সারাদেশে গত দেড় বছরে ২৮টি জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সময়ে আত্মঘাতী এক পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৬১ জঙ্গী। আলোচ্য সময়ে গ্রেফতার হয়েছে ৫৩ জঙ্গী যার মধ্যে বেশিরভাগই আত্মঘাতী দলের সদস্য (সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য)। জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সময়ে জঙ্গীদের জিম্মি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক নারী, পুরুষ, শিশুসহ নিরীহ নিরপরাধ মানুষজন। জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম-এই তিনটি জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গত দেড় বছর ধরে জঙ্গী বিরোধী অভিযান চালানো হয়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করে তাদের মাধ্যমসহ র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট জঙ্গী বিরোধী এসব অভিযান পরিচালনা করেছে। জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সময়ে বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটকে সহায়তা করেছে সামরিক বাহিনীও। পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এই ধরনের চিত্র ফুটে উঠেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০১৬ সালের এক জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার পর জঙ্গীরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনায় আসে। এর আগে জঙ্গীরা তৎপর হলেও আত্মঘাতী দলের সদস্যদের এমনভাবে বিদেশী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের জিম্মি করে হত্যা করার ঘটনা ইতোপূর্বে বাংলাদেশে আর ঘটেনি। এই ধরনের জঙ্গী তৎপরতায় নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুলশান হলি আর্টিজান ও সিলেটে জঙ্গী বিরোধী অভিযানে অন্তত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ কর্মকর্তা প্রাণ হারান এবং আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় আরেক দফা জঙ্গী হামলা চালায় জঙ্গীরা। এই দুইটি জঙ্গী হামলা ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আর কোন হামলা করতে পারেনি জঙ্গীরা। জঙ্গীরা হামলা করার আগেই গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতেই হতাহত ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়ায় জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এই অভিযানে তিন জঙ্গী নিহত হয়েছে, যার মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জেএমবি বা নব্য জেএমবির জঙ্গী হামলার বাইরে ব্লগার, বিদেশী নাগরিক, ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যাকা- করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠনটি। সারাদেশে জঙ্গী বিরোধী অভিযানের ব্যাপকতার মুখে এই জঙ্গী সংগঠনটির মেরুদ- এমনভাবে ভেঙ্গে পড়েছে যে গত দেড় বছরে তাদের আর কোন তৎপরতা লক্ষ্য করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেশিরভাগ সদস্যই নিহত বা গ্রেফতার হয়েছে। তবে এই জঙ্গী সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান সেনা বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের এক জুলাই রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত র‌্যাব পুলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ২৭টি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৫৩জন জঙ্গীকে গ্রেফতার ও ১০৩জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে নাখালপাড়া পর্যন্ত ৬১জন জঙ্গী নিহত হয়েছে। জঙ্গীরা যে এখনও শেষ হয়ে যায়নি রাজধানীর তেজগাঁও নাখালাপাড়ায় সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারির অভিযানে তিন জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনাটি তার প্রমাণ। তবে উঠে দাঁড়াবার শক্তি এখন জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেই। জান্নাতে যাওয়ার বাসনা নিয়ে নতুন নতুন জঙ্গীর সৃষ্টি হচ্ছে, যা তারা সংগঠিত বা তৎপর হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। বিগত দেড় বছরে দেশব্যাপী ২৭টি বড় জঙ্গী বিরোধী অভিযানের মধ্যে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে অর্থযোগানদাতা, তানভির কাদেরী, মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী, মারজান ও মেজর জাহিদ ওরফে মুরাদ নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে নব্য জেএমবির জঙ্গী সংগঠনটি কার্যত মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে।
×