ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অদক্ষ কর্মী নিচ্ছে না কাতার, বাংলাদেশের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

অদক্ষ কর্মী নিচ্ছে না কাতার, বাংলাদেশের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য কাতারের বাজারটি দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। কাতারের বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধের কারণে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে অনেক কম কর্মী দেশটিতে চাকরি নিয়ে গেছেন। অবরোধের চেয়ে বড় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কাতারে নির্মাণাধীন অধিকাংশ প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে রয়েছে। এখন নতুন করে তারা অদক্ষ কর্মী না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে দেশটিতে বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামসহ হোটেল মোটেল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। বর্তমানে স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলছে। এ কাজে দক্ষ কর্মী ছাড়া অন্য কোন কর্মীর প্রয়োজন নেই বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগ অর্ধেকে নামিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১৭ সালে কাতারে মোট পুরুষ কর্মী গেছেন ৭৭ হাজার ১৪৫ জন। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নারী কর্মী গেছেন ৩ হাজার ২৪ জন। নারী পুরুষ কর্মী মিলে ২০১৭ সালে দেশটিতে ৮০ হাজার ১৬৯ জন চাকরি পেয়েছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে ২০১৭ সালে ৮২ হাজার ১২ জন কর্মীর (নারী-পুরুষ মিলে) কর্মসংস্থান হয়েছে। কাতার বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল বাজার হিসেবে বিএমইটি উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবের পরেই এই বাজারে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের টার্গেট নেয়া হয়েছে। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কাতারে টার্গেট পূরণে কোন অসুবিধা হবে না। দূতাবাসের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে কাতারে কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন কর্মীর। ২০১৭ সালে কাতারে বাংলাদেশী নারী পুরুষ কর্মী মিলে মোট ৮০ হাজার ১৬৯ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ১৮৩ জন কম। এ ঘটনার পেছনে সৌদি আরব কাতারে অবরোধ দেয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও দূতাবাসের প্রতিবেদনে অবরোধের বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি। পেয়েছে কাতারে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার জন্য নির্মাণ কাজের মহাযজ্ঞ শেষ পর্যায়ের কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে দেশটিতে খুব বেশি কর্মীর প্রয়োজন নেই। কাতারে যেসব নির্মাণাধীন বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন শেষের পথে। ফলে এসব প্রকল্পে এত দিন অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা থাকলেও এখন শেষ হওয়ার পর এসব প্রকল্পের কারিগরি কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। কাতারে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে কাতারে যারা এসেছেন তাদের ৮০ ভাগই অদক্ষ কর্মী ছিলেন। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে এখন আর কাতারে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা খুব একটা নেই। দেশটিতে এখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারলে বাজারটি দেশের জন্য এখনও ভাল। কাতারে যে ধরনের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন সেই ধরনের কর্মী আমাদের দেশে এখনও তৈরি হচ্ছে না। এদিকে, কাতারে নতুন অভিবাসন নীতিও বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এই নীতি অনুসারে কাতারে নতুন প্রকল্পে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনভাবে কর্মী না এনে বর্তমানে কর্মরত কর্মীদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে নতুন প্রকল্প হাতে নিলেও বাইরে থেকে আর কোন কর্মী তারা নেবে না। এ ছাড়া ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ তার কয়েকটি মিত্রদেশের অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাতারে নিয়োগকর্তারা ধীরগতিতে চলছেন। অবরোধের কারণেও দেশটিতে কর্মী নিয়োগ কম হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাতারের বাজার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শ্রম সম্পর্ক জোরদার করতে উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তিতে বাংলাদেশ দূতাবাস নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে সুফল মিলবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বর্তমানে কাতারে বিভিন্ন অপরাধে দন্ডিত হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছেন ১৮৭ জন বাংলাদেশী। বন্দীদের মুক্তির বিষয়েও আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে। যাতে তাদের দন্ড মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
×