ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ

বিভাজন- নৈরাজ্যের বহির্প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

বিভাজন- নৈরাজ্যের বহির্প্রকাশ

প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বছর পূর্তির মুহূর্তেই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সিনেটে শেষ মুহূূর্তে এসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে এই অচল অবস্থা শুরু হয়। বিভাজিত দেশটিতে কেবল রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বমূলকই নয়, সরকারের ভেতরেও ব্যাপক নৈরাজ্য চলছে। ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা অন্তত সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর ওয়েবসাইট ও স্ট্রেট টাইমসের। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হয়েছে। সরকারের কার্যক্রম চালু রাখতে রাজস্ব বছর ২০১৮-এর চার মাস চলে গেলেও কংগ্রেস এখন পর্যন্ত নিয়মিত খরচের বিল পাস করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পহেলা অক্টোবর থেকে রাজস্ব বছর শুরু হয়। সরকারের রাজস্ব বছরের জন্য নিয়মিত খরচের বিল পাস করতে হয়। কংগ্রেস কিংবা প্রেসিডেন্ট সেই বিল পাস করতে ব্যর্থ হলে সরকার চালাতে স্বল্পমেয়াদি বা কন্টিনিউইং রেজুলিউশন্স পাস করতে হয়। যেটাকে সংক্ষেপে সিআরএস বলা হয়। আগের রাজস্ব বছরের মতোই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিআরএস কার্যকর থাকে। গত ডিসেম্বরে পাস হওয়া সিআরএসের মেয়াদ ছিল ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। কংগ্রেসের গবেষণা বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের আমলে আঠারো বার কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যাকে শাটডাউন বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, ওয়াশিংটনের এই অচলাবস্থা নতুন কিছু নয়। সরকারের খরচের বিল করতে কংগ্রেসের অপারগতা কয়েক দশক আগেও ছিল। বরাদ্দ ও রাজস্ব খরচের এই ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে চার দশক আগে। কিন্তু অধিকাংশ সময় কংগ্রেস নিয়মিত খরচের বিল যথাসময়ে পাস করতে পারেনি। ১৯৭৭, ১৯৮৯, ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে সঠিক সময়ে নিয়মিত রাজস্ব বিল পাস হয়েছিল। গবেষণা সংস্থাটি জানায়, কংগ্রেস অব্যাহতভাবে সিআরএসের আশ্রয় নিচ্ছে। কখনও কখনও একদিন থেকে এক বছর পর্যন্ত সিআরএস বহাল থাকে। সর্বশেষ গেল ডিসেম্বরে স্বল্পমেয়াদি খরচের বিল পাস হয়, যেটার সময়সীমা ছিল ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিভিন্ন বিষয় একটি খরচের মধ্যে ঠুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা কিংবা গুচ্ছ খরচের বিল এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীদের ওপর ধরপাকড়ের অতি আগ্রহ নিয়ে তিক্ত বিতর্কের পর নতুন করে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হলো। মধ্যরাতের এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে তিনি বৈধ নাগরিকদের স্বার্থের ক্ষতি করতে পারবেন না। এই অচলাবস্থার ক্ষতিকর প্রভাব যতটা হওয়ার কথা ছিল ঠিক ততটা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যদি দীর্ঘদিনের জন্য কার্যক্রম বন্ধ থাকে, সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত কিছু সংস্থাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সাড়ে আট লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকবেন। কাজ করতে না পারলে তাদের অর্থ না পাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ছুটিতে যাওয়ার আগে এ সপ্তাহে শেষবারের মতো তারা বেতন পাবেন। সরকারের অপরিহার্য কার্যক্রমগুলো চলবে। সামাজিক নিরাপত্তা চেকগুলো পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পোস্ট অফিস খোলা থাকবে। যদি অন্যকিছু না ঘটে, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও সামরিক তহবিল ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পার্ক খোলা থাকবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা যতটা তীব্রতর হওয়ার কথা ছিল, সপ্তাহ শেষে তা কমিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনায় ছুটিতে যাওয়া কর্মীদের সামান্য ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল কংগ্রেস। ট্রাম্প প্রশাসনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে শুক্রবার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ দফায় কতজনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হবে এবং কোন্ কোন্ দফতরের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা জানা যায়নি। সামরিক বাহিনী ॥ সরকারের অচলাবস্থার কারণে আফগানিস্তানে যুদ্ধ, ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সামরিক বাহিনীর ১৩ লাখ সদস্য প্রতিদিনকার মতোই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। প্রয়োজনীয় নয় সামরিক বাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বেসামরিকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হতে পারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছেন, তহবিল আটকে গেলে রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই যুদ্ধজাহাজগুলো চলতে হবে, বন্ধ থাকবে সামরিক বিমানের উড্ডয়নও। বিচার বিভাগ ॥ মার্কিন বিচার বিভাগের বেশিরভাগ কর্মীই প্রয়োজনীয়। সরকারী অচলাবস্থা শুরু হলে বিভাগটির এক লাখ ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ৯৫ হাজারই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
×