ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, হাজার কোটি টাকা কিচ্ছু না ॥ ফেক নিউজ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, হাজার কোটি টাকা কিচ্ছু না ॥ ফেক নিউজ

মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান ডোলান্ড ট্রাম্পের কথায়, ‘ফেক নিউজ’ খুব চালু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। তিনি অমুক কুকাম করেছেন, মিথ্যে বলেছেন, খবর হলো মিডিয়ায়। কোন সাফাই না গেয়ে, টুইটে লিখলেন, ‘ফেক নিউজ।’ চান না ‘ফেক নিউজ’-এর যাচাই। করলে সমূহ বিপদ। বাংলা প্রবাদ, যা কিছু রটে, ঘটে কিছু বৈ কী। হিন্দিতে বলে, ডাল মে কুছ কালা হায়। রটনার সঙ্গের ঘটনার যোগসূত্র, সামান্যতম হলেও, সম্পর্কিত। চানক্যর কথা মনে রাখার, ‘রাজা কখন উৎকোচ নেয়, মাছ কখন জল পান করে কেউ জানে না। দ্যাখে না। সবই গোপনে, গভীরে। অপ্রকাশ্য।’ তার মানে, ব্যাপার সংগঠিত। বললে অস্বীকার। বলবে ‘ফেক নিউজ।’ বললে, বানানো, মিথ্যে। সাক্ষী নেই। প্রমাণ দিক। প্রমাণ রেখে কেউ ঘুষ খায় না। মাছ জল খায় না। চুরি করে না। ডাকাতি করে না। হত্যা করে না। খুঁজে বের করতে হয় আলামত। করার দায়িত্ব যাদের তারা যদি ঘুষ নেয়, গোপনে-গভীরে জল খায়, কার বাপের সাধ্যি ফয়সালা করার। বাংলায় আরও একটি প্রবাদ ‘চোরের মাসতুতো ভাই।’ বিএনপি অস্বীকার করবে। করার শপথ আজন্ম। মাঝে-মাঝে ঝামেলা হয়। কী কুক্ষণে পদ্যটদ্য লিখি, বইও প্রকাশিত হয়, হয়তো পড়েও কেউ কেউ। গালমন্দও করে। ‘হাতের কাছে পেলে কল্লা কাটবে; প্রতীজ্ঞায় বলীয়ান। ধর্মীয় মৌলবাদীরা তো আছেই। একদা ছাত্র ইউনিয়ন করতাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে (পড়েছি সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে, জগন্নাথ কলেজে, ঢাকা কলেজে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) ছোটখাটো কমরেড (নেতা। বন্ধুরা বলতো ‘কম লালÑকম রেডÑমূলত পা-া।) কমিউনিজমে আস্থা হারাইনি কখনও। এখনও নয়। কলকাতায় থাকাকালীন রাজনীতির সঙ্গে জড়াইনি ঠিকই। থাকতুম অন্নদাশঙ্কর রায়ের আস্তানায়। ¯েœহে। বলতুম, ‘দাদু।’ লোকে বলতো ‘বড়ো নাতি।’ দাদু-নাতির সম্পর্ক অম্লান। চিরস্থায়ী। দাদুর ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই।’ নাতির অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধবী কমিউনিস্ট বা কমিউনিস্ট-ঘেঁষা। কমিউনিস্ট-নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের (সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় একদা ভারতীয় লোকসভার স্পীকার) বড়ো কন্যা অনুরাধার বন্ধু। অন্নদাশঙ্কর রায় রাজনীতি করতেন না, তবে গান্ধীবাদী। দাদুর কথা, ‘গান্ধীবাদ আর প্রত্যক্ষ-রাজনীতিক এক নয়।’ এই নিয়ে দাদু-নাতির যুক্তি, বাকবিত-া কম হয়নি। থাক স্মৃতিবাচ্যমালা। বলছিলাম ঝামেলার কথা। বিদেশে দেশীয় রাজনীতি চলবে না। দেশীয় রাজনীতি বিদেশে অর্থহীন। বিদেশ থেকে দেশীয় রাজনীতি যারা করেন, কোন আহ্লাদে, কি প্রাপ্তির আশায়, কোন্ মতলবে (যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় ‘নছুল্লা’য়) অজানা। যারা আ.লী (আওয়ামী লীগ), বিএনপি করেন, দলাদলি, মারপিট করেন (দলাদলি, মারপিট দুই দলেরই কালচার বিদেশেও), দেশের লোকের কিছু যায়-আসে? দেশের দলের কিছু? নেতা বিদেশে আসেন, দলীয় সমর্থক সংবর্ধনা দেয়, খাওয়ায়, দামী উপহারও দিয়ে ধন্য। ফেসবুকে ছবি ছড়ায়। বিদেশে নিবেদিত এই কর্মী-সমর্থকরা দেশে গেলে নেতানেত্রীর নাগাল পাওয়া দূর, চৌহদ্দির আশপাশেও ঘোরাঘুরি ‘প্রায়-নিষেধ।’ এরকম আক্ষেপ অনেকের মুখেই শুনেছি। রাজস্থানে একটি দোহা আছে, ‘প্রাণসখা, তোমার অবজ্ঞা, প্রত্যাখ্যানে আমি ধন্য।’ Ñবিদেশে দেশীয় রাজনীতির বেলেল্লপনা নিয়ে বিস্তারিত লিখলে দলীয় রাজনীতিকরা পেঁদিয়ে অজানা দেশে পাঠাবে। ‘অজানা দেশ’ কোথায়? বাংলাদেশের সংবাদপত্রে কারোর মৃত্যুর পরে লেখা হয় ‘অজানা দেশে যাত্রা।’ আচ্ছা, অজানা দেশ কাকে বলে? দেশ বলতে ভৌগোলিক সীমাভূমি। দেশের লোকলৌকিকতা, সংস্কৃতি আছে। দেশের ‘রাষ্ট্রনীতি’, সংবিধান আছে। জনসমাজ আছে। পারিপার্শ্বিক আছে। রাজনীতিও আছে। Ñধর্মের কথা বলছি না। বললে ক্যাঁচার। জ্ঞানপাপীকে ঘাঁটানো যে কী বিপদ, যাজ্ঞবল্ক্য, চার্বাক-কেচ্ছা পড়ুন। কথার পিঠে কথা জড়িয়ে বিতিকিচ্ছিরি, মূল বক্তব্য থেকে দূরে। সাতসকালে, আট টায় (শীতের সময়। অন্ধকার। বাংলাদেশে বোধ হয় দুপুর ১টা।) টেলিফোন। শুনে মেজাজ তিরিক্ষে। ঘুমমাখা চোখ। ভোর তিনটে-চারটে পর্যন্ত বইয়ের পাতা উল্টিয়ে বিছানায় গিয়েছি। টেলিফোনে ভদ্রলোক বললেন, কণ্ঠ বেশ কাব্যমাখা, বিনয়ী। ‘আমাকে চিনবেন না। আপনাকেও চিনি না। আমার স্ত্রী বাংলায় এমএ। আপনার কবিতার’Ñ ইত্যাদি। অতঃপর, ‘আমি ব্যবসায়ী। বার্লিনে যাব। দেখা করতে চাই। আপনার বইয়ে যদি স্বাক্ষর করেন, আমার স্ত্রী খুশি হবেন।’ তাঁর পরিচয় জানতে উৎসাহী, এড়িয়ে বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী।’ জানতে ভুলে যাই, জিজ্ঞেস করি না, কোত্থেকে ফোন নম্বর পেয়েছেন। বার্লিনে এসে আবার ফোন। অচেনা লোকের সঙ্গ এড়াই। বিশ্বজুড়ে বিস্তর বাজে লোক। আইএস-আল-কায়েদা-তালেবানের ছড়াছড়ি। ভদ্রলোক যাঁর আস্তানায়, চিনি তাঁকে। বিএনপির। অবাক মানি। কিন্তু তাঁর অমায়িক কথায়, ভদ্রতায় কাবু হই। নিমন্ত্রণ করেন রেস্তরাঁয়। যাই, উপহার দেন একটি ফুলহাতা সোয়েটার। বলেন, ‘আপনি তো বাংলাদেশ থেকে চার দশকের বেশি নির্বাসনে, অতীত হয়তো ভুলে গেছেন। আড়ং-এর নাম শুনেছেন? আড়ং থেকে আমার স্ত্রী কারুকাজ করা পাঞ্জাবি পাঠিয়েছেন, আর এই সোয়েটার নিজের হাতে বুনেছেন, চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের রাঙামাটির স্টাইল’। হেসে বলি, ‘বৌদ্ধদের রাঙামাটির স্পেশাল স্টাইল আছে না-কি? রাঙামাটি চিনি। রাঙামাটির এক বৌদ্ধ তরুণীর মায়ায় জড়িয়েছিলুম।’ শুনে বিগলিত। আপন হন। তাঁর আপনতাকেই অস্ত্র করি। ক্রমান্বয়ে নিজেকে প্রকাশিত করেন, বিএনপির অন্দর মহলের। আরও ঘনিষ্ঠ হই। ঢুকি তাঁর সঙ্গে অন্দরমহল থেকে হেঁসেলে। অন্দরমহল থেকে হেঁসেলে ঢোকার কুঅভ্যেস আজকের নয়। জিয়ার বহু মন্ত্রী, এরশাদের মন্ত্রী, এমপি, বিএনপির মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা-উপনেতা অনেকেই দেখা করেছেন, দেখা করতে আসেন, নিজেদের লোক ভাবেন, আপন করেন, করতে চান। কেচ্ছাটা জানা। পাত্তা দিই না। কে মন্ত্রী, কে এমপি, নেতা-উপনেতা জরুরী নয়। যতই ক্ষমতাবান হোক, আজ আছে কাল নেই। যে সম্রাট মহাকবি ওভিদকে নির্বাসনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন, সম্রাটের নাম সেই কবেই ইতালির নাম ভুলে গেছে। ওভিদের স্টাচু ইতালির নানা শহরে আজও উজ্জ্বল, ঝলমলে। যে মন্ত্রী, ডিসি, গোয়েন্দা কর্তা কবি নজরুল ইসলামকে হাজতে-জেলে পাঠিয়ে রাজন্যবর্গের বাহবা পেয়ে চাকরিতে পদোন্নতি, তারা কোথায় আজ? একজনও স্মরণীয় কী? নাম কয় কেউ? স্থির বিশ্বাস, ভদ্রলোক ঢাকায় মদটদ গিললেও, পরিমাণে বেশি নয় এবং একই সঙ্গে নানা মদ। শুরু করেন শ্যাম্পেন নিয়ে। অতঃপর বিয়ার। ওয়াইন। শাদা। লাল। কথায় খৈ ছোটে। হঠাৎ থেমে, ‘আপনাকে আপন ভাবি। বিশ্বাস করি। কোন দলটল করেন না। বাংলাদেশের উত্থান-পতন, রাজনীতি নিয়েও মাথা ঘামান না। বাংলাদেশ গোল্লায় গেল কি না গেল ভাবেন না নিশ্চয়। বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় এলো না এলো কিছুই যায় আসে না আপনার। বাংলাদেশকে হয়তো ভুলেই গেছেন।’ সায় দিই। বলি, বাইরে মাইনাস শীত। হুইস্কি খাওয়া দরকার। খুশি হন। অর্ডার দেন। পর পর ডবল পেগ। শুনেছি, অতিরিক্ত মদ গিলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারলে মাতাল হয়। মনের কথা, গোপন কথা, সত্যি কথা কয়। ভদ্রলোক আ.লী, শেখ হাসিনাকে শাপান্ত করেই ক্ষান্ত নন, কুকথা, গালিগালাজও করেন। বলি, ‘ঠিক বলেছেন।’ ধরে নেন তাঁর দলের ঘোরতর সমর্থক। এবার তাঁর মনের কথা, গোপন কথা, সত্যি কথা শোনার জন্যে আরও সায় দিয়ে উৎসাহিত করি। ভদ্রলোক এবার হাত ধরেন। বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আপনি কাউকে বলবেন না। আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তবু অনুরোধ ফাঁস করবেন না। আল্লাহর কসম খান।’ হুইস্কি খেয়ে কসম খাই। খেয়ে আ.লী, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। বলি, এবার বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। নির্বাচনে যোগ দিচ্ছেন তো? দিলে কী জিতবেন? ভদ্রলোক ॥ একশ ভাগ। Ñ কী করে এতটা সিওর? ভদ্রলোক ॥ গোপনে গোপনে আমরা নির্বাচন কমিশনের কর্তা, লোক, অফিসার, জেলার ডিসি, সেনাকর্তাদের কেনার প্ল্যান করেছি। যে যত টাকা চাইবে, পাবে। পাঁচ-দশ কোটি টাকা কিছুই না। শত কোটি, হাজার কোটি পাবে। আওয়ামী লীগের ওপর আমেরিকা নাখোশ। আমেরিকার চাপে ভারতও হচ্ছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লতিফুর রহমানকেও কিনেছিলাম। কসম খেয়েও ভদ্রলোকের কথা রাখতে পারলুম না। নিশ্চয় বেইমান। এই লেখা পড়ে বিএনপি বলবে ‘সব বাজে কথা। ফেক নিউজ।’ তাই যদি হয় ভোটের এত আগে মির্জা ফখরুল কোন্ আশ্বাসে নিশ্চিত, বলছেন ‘৮০ ভাগ ভোট পাব?’ ২০/০১/২০১৮ ॥ বার্লিন, জার্মানি
×