ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

টেকসই উন্নয়ন

সদ্য সমাপ্ত হলো সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ-২০১৮) এ সম্মেলন শেষে বিদেশী সহযোগীরা যথার্থই বলেছেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। তারা এ উন্নতি ধরে রাখতে ও উন্নয়ন গতিকে আরও এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকারও করেছেন। সরকার বলেছে, সবাইকে নিয়েই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করতে হবে। ঢাকায় ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম-২০১৫’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময় অত্যন্ত দরকারি কথা তিনি খোলাখুলি সহজ ভাষায় বলে দেন। তার ভাষ্য : ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আরও সম্পদ চাই। এজন্য আরও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন।’ দেখা যাচ্ছে ওই বছরেই বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে বাংলাদেশ অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করে। আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৬’ থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ২শ’ কোটি ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করেছে। এটা ঠিক যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুত ও পেট্রোলিয়াম, তৈরি পোশাক শিল্প এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে আগের তুলনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ফুড প্রোডাক্ট এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে কী উপায়ে আরও বিনিয়োগ আনা যায় এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এছাড়াও আরও কয়েকটি খাত শনাক্ত করে পরিকল্পিতভাবে সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেসব খাতেও বিনিয়োগ আনা অসম্ভব হবে না। বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। বিনিয়োগের জন্যও যে এটি সুবর্ণ সময়, এই যুক্তিগুলো ছোট ও বড় সব স্তরের বিনিয়োগকারীর সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই। নতুন অর্থবছরের শুরুতে আমরা সুসংবাদ পেয়েছিলাম। দেশের সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ১০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। অবশ্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধাসহ আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতাও বাংলাদেশের রয়েছে। আগামী মার্চ মাসে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে বিশ্বে সুনামের পাশাপাশি বিনিয়োগ, বাণিজ্যে নতুন কিছু সুবিধাও পাবে বাংলাদেশ। বিনিয়োগেও বিদেশীদের আস্থা বাড়বে। আমরা আগেও বলেছি গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। তবে গণতন্তকে আহত করে গণতন্ত্রবিরোধীরা নিজেদের আখের গোছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয় না, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। মানুষের প্রত্যাশা- বাংলাদেশ অভীষ্ট টেকসই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
×