ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাবিতে পাখিমেলা

অতিথি পাখির কলকাকলি, ক্যাম্পাসে উৎসব পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

অতিথি পাখির কলকাকলি, ক্যাম্পাসে উৎসব পরিবেশ

জাবি সংবাদদাতা ॥ পাখির কলকাকলি আর পাখিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের একমাত্র পাখিমেলা। মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। অতিথি পাখির সরব সান্নিধ্যে সারাটা দিন পার করেছে দেশী-বিদেশী অসংখ্য পাখিপ্রেমী। পাখিমেলার এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকেই মৃদু শীত উপেক্ষা করে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ভিড় জমায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব দর্শনার্থী আসে। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরের শত ব্যস্ততার মধ্যে অবসাদ দূর করতে জাবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আর পাখিমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে কেউ এসেছে পুরো পরিবারকে নিয়ে, আবার কেউ তার প্রিয়জনের সঙ্গে এসেছে, কেউবা আবার এসেছে বন্ধুরা মিলে। তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাখির কিচিরমিচির শুনতে সারাদেশের পাখিপ্রেমীরা সকাল থেকেই ভিড় জমাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোর পাশে। দর্শনার্থীরা জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দিনব্যাপী পাখির ডানা মেলে আকাশে ওড়াউড়ি, সাঁতারকাটা উপভোগ করে। এসময় কিছুক্ষণ পর পর পাখিরাও এক লেক থেকে আরেক লেকে ওড়াউড়ি করে দর্শনার্থীকে আনন্দ দেয়। ‘পাখপাখালি দেশের রতœ, আসুন করি সবাই যতœ’ স্লোগান ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এ মেলার আয়োজন করা হয়। সকাল ১০ টায় প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বেলুন উড়িয়ে পাখি মেলার উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘বন্যপ্রাণি, পশু-পাখি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এজন্য পরিবেশকে বাঁচাতে পশু-পাখি, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রাণ থেকে ভালবাসতে হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা সৌভাগ্যের বিষয়। প্রকৃতির অনুষঙ্গ প্রাণিগুলোর বসবাসযোগ্য পরিবেশ অক্ষুণœ রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’ আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকেই হয়ত মনে করছে পাখিমেলায় শুধু পাখি দেখতে আসছি। কিন্তু পাখি মেলা আয়োজনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসচেতনতা তৈরি করা। কেবল পাখি নিয়েই সচেতনতা তৈরি করব না, আমরা সকল প্রকার বণ্যপ্রাণী নিয়ে সচেতনতা তৈরি করব। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ মঞ্জুরুল হক, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতনিধি রকিবুল আমিন, ডব্লিউআরসির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক সাজেদা বেগম এবং মেলার আহ্বায়ক ও পাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ কামরুল হাসান। দেশে পাখি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজাতির পাখি শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখায় মেলায় হাসনাত রনি, রাজিব রাশেদুল কবির এবং মোঃ তারিক হাসানকে ‘বিগবার্ড অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা দেয়া হয়। দিনব্যাপী এই মেলায় পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলা অয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
×