ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীপনা ও নিহতের নেপথ্যে অভিভাবকের দায়িত্বহীনতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

 জঙ্গীপনা ও নিহতের নেপথ্যে অভিভাবকের  দায়িত্বহীনতা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্কুল শিক্ষার্থীরা জঙ্গীপনায় জড়াচ্ছে এমন তথ্য বিভিন্ন সময় ওঠে আসলেও সচেতন হচ্ছেন না অভিভাবকরা। বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মিশে নিহতের শিকার হলেও অভিভাবকদের মাঝে কোন অনুশোচনা নেই এমন মন্তব্য পুলিশের। কলেজিয়েট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান খুনের ঘটনায় যে পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এরা সবাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কর্তৃপক্ষ এমনকি পরিবারের কোন সচেতনতা না থাকায় এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে কিছু সাইনবোর্ডধারী ব্যক্তির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। এদিকে, কাজেম আলী হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নাসিফ নিখোঁজের পর ঢাকার নাখালপাড়ার জঙ্গী আস্তানায় সম্প্রতি নিহতের ঘটনা শেষে পরিবারের অসচেতনতার বিষয়টি ওঠে এসেছে। পুলিশের তদন্তে এ দুটি বিষয়ে দুই স্কুলছাত্র নিহতের ঘটনায় পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চাপ না দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রতিনিয়ত মনিটরিং ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি দুপুর দুইটার দিকে নগরীর জামাল খান সড়কের ডাঃ খাস্তগীর স্কুলের সামনে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হয় আদনান। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ৯ম শ্রেণীর এ ছাত্রের বাসা জামালখান সড়কে প্রেসক্লাবের পেছনে। নিজ বাসা থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরে দিন-দুপুরে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না দেয়ার পরও পুলিশ অভিযানে নেমে গত বুধবার এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এরা সবাই শিক্ষার্থী। তবে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফটিকছড়ি এলাকা থেকে চাঁন্দগাঁওয়ের হাজেরাতুজ ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মঈন খান ও সাব্বির হোসেন, ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজের আব্দুল্লাহ আল সাইদ ও হলি ফ্লাওয়ার স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র এখলাছ উদ্দিন আরমানকে, আর চাঁন্দগাঁওয়ের হাজেরাতুজ ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মুনতাছির মোস্তফাকে গ্রেফতার করা হয় বাদুরতলা এলাকা থেকে। এরমধ্যে সাব্বির ও সাইদের নামে চকবাজার থানায় আগে থেকেই মামলা রয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে মহসিন কলেজের মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধ থেকে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা। অপরদিকে, গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার নাখালপাড়ার জঙ্গী আস্তানায় নিহত হয় কাজেম আলী হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র নাসিফুল ইসলাম (১৫)। এর আগে গত ৬ অক্টোবর মাসে নাসিফ স্কুলে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় নাসিফের বাবা একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছেন পরদিনই। কিন্তু দীর্ঘ ৪ মাসেও নাসিফের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঢাকার জঙ্গী আস্তায় এই কিশোরের নিহতের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে নিহত দুই জঙ্গীর ছবি প্রকাশের পর নাসিফের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পরিবারের সদস্যরা। তারা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আফতাবের কাছে নাসিফ তাদের নিখোঁজ ছেলে বলে নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসাইন জানান, পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। সন্তানেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া থেকে শুরু গৃহে অবস্থান পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কর্মকান্ডের মনিটরিং প্রয়োজন। সন্তানদের প্রয়োজনে ঘরোয়া কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে।
×