ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষাবঞ্চিত শত শত শিশু

ভৈরবে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

ভৈরবে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পে  মানবেতর জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ১৯ জানুয়ারি ॥ অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বেড়ে উঠছে ভৈরবের কালিকাপ্রসাদের ছিদ্দিরচর এলাকার আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ আর আবাসন প্রকল্পের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শত শত শিশু। প্রকল্প এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রয়োজনবোধ করলেও দারিদ্র্যপীড়িত অভিভাবকরা দূরের স্কুলে তাদের সন্তানদের পাঠাতে পারছেন না। অপরদিকে সরকারী উদ্যোগে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও নাগরিক অধিকারবঞ্চিত ওইসব প্রকল্পের অধিবাসীরা বাধ্য হচ্ছেন মানবেতর জীবনযাপনে। কোথাও কিছু নেই। কেউ যেন নেই তাদের জন্য। জানায়, অসহায়, দরিদ্র অধিবাসীরা। জানাগেছে, ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের ছিদ্দিরচর বাজার এলাকায় আদর্শ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ৪৭টি, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০টি এবং আবাসন প্রকল্পে ২০টিসহ মোট ১১৭টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করে সরকার। ১৯৯৭ সালে সাত অক্টোবর আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, ২০০০ সালের ১৮ নবেম্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আর ২০০২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তত্ত্বাবধানে নির্মিত আবাসন প্রকল্প বুঝে নিয়ে অধিবাসীদের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। বাসিন্দারা জানায়, বিগত ২০-২২ বছরে প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ পাওয়া তাদের ঘরগুলোর ওপরের চালাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি আর শীতের শিশির বাইরে পড়ার আগেই তাদের ঘরের ভেতর পড়ে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এতে করে শিশু আর বৃদ্ধসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের চরম দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে। তাদের এইসব দুঃখ-দুর্ভোগের কথা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনে বহুবার জানিয়েও কোন ফল তারা পায়নি বলে জানান আদর্শ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের বসবাসকারীরা। এ প্রকল্পে বসবাসকারী শিশুদের শিক্ষার জন্য কোন সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। শুরুতে শিক্ষার জন্য ব্র্র্যাকের সহায়তায় তিন বছর মেয়াদি একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করে স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, সাদ বাংলাদেশ। সেটি বন্ধ হওয়ার পর এখানকার শিশুদের শিক্ষার জন্য আর কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি।পানি সরবরাহের জন্য বসানো নয়টি টিউবওয়েলের সব ক’টি বিকল হয়ে যাওয়ায় নদী-নালার পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন ওখানে বসবাসকারী বাসিন্দারা। শিশুদের নানা ধরনের রোগ-বালাই লেগে থাকে বলে জানান তারা। এ বিষয়ে অনেক দেন-দরবার করেও কোন নতুন বরাদ্দ তাদের জন্য জুটেনি বলে অভিযোগ তাদের। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় টয়লেটের ময়লা-আবর্জনা উপচে পড়ে আঙ্গিনায়। আর একটুখানি বৃষ্টি হলেই সেই নোংরা পানি ঘরের ভেতর ঢুকে বাস অযোগ্য পরিবেশ তৈরি করে বলেও জানায় তারা। এ দিকে প্রকল্প এলাকায় কোন বাউন্ডারি দেয়াল না থাকায় এলাকার আৎকাপাড়া গ্রাম থেকে ছিদ্দিরচর বাজারগামী লোকজনসহ বিভিন্ন যানবাহন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেতর দিয়ে চলাচল করে। এতে করে শিশুরা প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হচ্ছে। রাত-দিনের পরিবেশ নষ্ট করছে ওই অবাধ যাতায়াত। এ ছাড়াও খোলামেলা থাকায় ওইসব পরিবারের যুবতী মেয়েদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।
×