ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

কেরানীগঞ্জে শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

কেরানীগঞ্জে শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১৯ জানুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জে বর্জ্য শোধনাগার ছাড়াই চলছে শতাধিক শিল্পকারখানা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন বর্জ্য শোধনাগার ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কারখানাগুলো। কেরানীগঞ্জে শিল্প কারখানাগুলোতে বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় ২০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষণের কারণে কেরানীগঞ্জে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলো থেকে ৬২ রকম রাসায়নিক বর্জ্য পানিতে মিশছে। কেরানীগঞ্জে শিল্প কারখানার সংখ্যা ৬ শতাধিক। এর মধ্যে রাজধানীসহ আশপাশে রয়েছে প্রায় ৬০০ শিল্প কারখানা। এসব বর্জ্যরে কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর আশপাশের নদীর পানি। পরিস্থিতি এমন যে, দূষণের কারণে পানি শোধনে কোন অবস্থা এখন আর নেই। অথচ দূষণের কারণে রাজধানী ঢাকা এখন হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৫ বছর পর বসবাসের অযোগ্য হবে রাজধানী ঢাকা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পানি খাওয়া দূরের কথা এ পানিতে গোসল করাও ক্ষতিকর। ৩০টি কঠিন রোগের অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়ু ও ভূ-পৃষ্ঠের পানি দূষণ এই তিনটিকে দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যের প্রমাণ মেলে রাজধানীর হাসপাতাগুলোতে আসা রোগীর চিত্র দেখেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ঝুঁকির মুখে আগামী প্রজন্ম। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বুড়িগঙ্গাকে চিহ্নিত করেছেন সবচেয়ে দূষণকবলিত নদী হিসেবে। কেরানীগঞ্জে ছোট বড় ৬শ’ মিল কারখানা থাকলেও মাত্র ১টি কারখানায় ইটিপি ট্রিটমেন্ট প্লান রয়েছে। তবে বিশিক শিল্প নগরিতে আরও কয়েটি ইটিপি প্লান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে হাজারিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ শিল্প কারখানা (যাজার বর্জ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হত) ৭০-৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান ওই এলাকা ছেড়ে সাভারে স্থানান্তরিত কারা হয়েছে। যে কারণে বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি ও বর্জ্য দখল দূষণ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তবে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এখনও নদীর পানি দূষিত করছে বিভিন্ন প্রকার রং ও কেমিক্যাল দ্বারা। এসব শিল্প কারখানার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পুনরায় বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত ও বিষাক্ত হবে বলে জানান পরিবেশবাদী আন্দোলনের আবু নাসের খান। কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী কালিগঞ্জ, চর কালিগঞ্জ, খেজুরবাগ, আগানগর, পূর্ব আগানগ, জিনজিরা, গোলাম বাজার, শুভাঢ্যা, ভাংনা ও খেজুর বাগের সাতপাখি এলাকায় অবৈধ শিল্প কারখানাগুলো এখন বুড়িগঙ্গা নদীর জন্য এখন হুমকি স্বরুপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার ওই এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা লাগিয়ে জরিমানা পর্যন্ত করেছে। কিন্তু কিছু দিন ওই প্রতিষ্ঠানগুলো রাতের আধারে গোপনে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী চাচ্ছে ওই অবৈধ কারখানাগুলোকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে সরিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কথামতো লাকিরচরে স্থানান্তরিত করলে এখানকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পানসহ ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ডেকে কঠিনভাবে বলে দিয়েছেন যাতে যত্র-তত্র শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠতে না পারে। এ জন্য চেয়ারম্যানগণ যারযার এলাকায় মাইকিং পর্যন্ত করে দিয়েছে বর্জ্য আবর্জনা যাতে নদীতে ফেলা না হয়। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিদ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বর্জ্য আবর্জনা দিয়ে গ্যাস তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সভায় এসব বক্তব্য রাখেন। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ওই বর্জ্য আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য ৪০টি ভ্যানগাড়ি এবং জার্মান থেকে আরও ৪টি আবর্জনা নিষ্কাসনের জন্য গাড়ি আমদানি করেছেন। তিন আসাবাদী অতি শীঘ্রই কেরানীগঞ্জ একটি আধুনিক শহরে পরিণত হবে।
×