ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সহযোগিতার হাত বাড়ান

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

সহযোগিতার হাত বাড়ান

ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের ২০১৮ সালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সময়মতো অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নির্দেশিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) সফলভাবে বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যাচ্ছে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) বাস্তবায়নের দিকে। সার্বিক আর্থ-সামাজিক বিশেষ করে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যসহ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন জাতিসংঘসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এর পরও টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটে বিডিএফের চলতি বৈঠক একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় প্রণোদিত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে, সেদিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলছে বিধায় বাংলাদেশ এই দাবি করতে পারে। বাংলাদেশকে বর্তমান নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি যে অতীতের তুলনায় ভাল সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য সস্তা শ্রমের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রভূত আশাব্যঞ্জক। সর্বোপরি বিদ্যুত উৎপাদন পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। এর পাশাপাশি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিও বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অনুকূলই বলতে হবে। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নেমে যাওয়ায় ওপেকভুক্ত দেশগুলোসহ অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি আছে বিপাকে। অনেক দেশেই এর ফলে নেমে গেছে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অথবা হয়েছে শ্লথগতির। এই পর্যায়েও বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের জাতীয় প্রবৃদ্ধি বলতে হবে সন্তোষজনক। এই তিনটি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান ভাল। কেননা চীনে এর মধ্যে শ্রম মজুরি বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতারা এখন ঝুঁকছেন বাংলাদেশের দিকে। ভারতের তুলনায়ও শ্রমবাজারসহ নানাদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনুকূল। বিদ্যমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সেক্ষেত্রে সরকারকে বিনিয়োগের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে দূর করতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবে আশার কথা এই যে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ধীরে-সুস্থে হলেও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কয়েকটি সরকারী সংস্থাকে সমন্বয় ও একীভূত করে ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠাসহ ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এর অন্যতম। গ্যাসের সমস্যা আপাতত থাকলেও বিদ্যুত সমস্যা থাকছে না আগামীতে। রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিজ অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ চার লেন বিশিষ্ট সংযোগ সড়ক এবং আন্তঃদেশীয় কানেকটিভিটি সম্পন্ন হলে ভূমি সমস্যাসহ অবকাঠামোগত সমস্যা দূর হবে অনেকাংশে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামীর অমিত সম্ভাবনা হলো সুবিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের ‘ব্লু ইকোনমি’ বা সমুদ্রসম্পদ অর্থনীতি। আগামীতে সমুদ্রেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সমূহ সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল। বন্দর অবকাঠামোসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যথাযথ অগ্রগতি সাধিত হলে বিপুল জনসংখ্যাধিক্যের দেশে সহজলভ্য শ্রম এক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সরকার সার্বিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে বলেই প্রত্যাশা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও প্রত্যাশিত বৈকি।
×