ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

-কবির হোসেন, কেশবপুর থেকে

ইন্টারনেট বদলে দিয়েছে কেশবপুরের জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

ইন্টারনেট বদলে দিয়েছে কেশবপুরের জীবনযাত্রা

তহমিনা বেগম কেশবপুর পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারে এসেছেন তাঁর নয় মাস বয়সী ছেলের জন্ম নিবন্ধনের সনদপত্র নিতে। আসার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সদনপত্র পেয়ে তিনি বেজায় খুশি। কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল গ্রামে তহমিনা বেগমের বাড়ি। স্বামী তাহের খা একজন দিনমজুর। জমি জায়গা নেই। মাত্র সাত কাঠা জমিতে তিন ভাইয়ের ভিটাবাড়ি। হাসিমাখা মুখে তহমিনা বেগম জানালেন, এর আগেও তিনি মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট পৌর ডিজিটাল সেন্টার থেকেই নিয়েছেন। শুধু তহমিনা বেগম নয় কেশবপুরের সকল মানুষই এখন জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেটসহ নানামুখী ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার থেকে। মানুষের জীবন যাপনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে ইন্টারনেট। গোটা দুনিয়া চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রামের অজপাড়া গায়ের মানুষ বিশ্বের যাবতীয় খবর যেমন ঘরে বসে জানতে পারছেন তেমনি দোরগোড়ায় হাতের কাছেই পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সেবা সমূহ। কল্পনায়ও যা আশা করিনি সেটাই আজ হাতের নাগালে পেয়ে গেছে মানুষ। কম্পিউটার বা একটি স্মার্ট ফোনেই যে কোন সময় প্রয়োজনীয় কাজটি মুহূর্তেই সেরে ফেলছেন ম্যাজিকের মতো। গ্রামের মানুষের মধ্যে যাদের কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন নেই তারা নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে প্রয়োজন মতো কাজটি সেরে নিতে পারছেন অনায়াসে। হেঁটে অথবা গরুর গাড়িতে চড়ে এখন আর উপজেলা বা জেলা শহরে যেতে হয় না সরকারী অফিসে জরুরী কাজের জন্য। একজন সংবাদকর্মীকে এখন আর পোস্ট অফিসে গিয়ে খামের ভেতর সংবাদ পাঠাতে হয় না। ফ্যাক্সে নিউজ পাঠানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। আবার সংবাদটি প্রকাশের জন্য সাতদিন ধরে অপেক্ষায়ও থাকতে হয় না। গ্রামের একজন কৃষককে জমির পর্চা নিতে মাসের পর মাস ভূমি অফিসে হাঁটা লাগে না। কৃষকদের ফসলের সমস্যা নিয়ে কৃষি অফিসে বার বার যেতে হয় না। ইন্টারনেট সব কিছুই যেন পানির মতো সহজ করে দিয়েছে। চোখের পলকেই সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে ইন্টারনেট নামক জাদুকরী সেবাটি। সাতসমমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যেন পাশাপাশি বসেই কথা বলছেন মানুষ। ইন্টারনেটের সুবাদে প্রত্যন্ত একালার অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীর কাজ মনিটরিং করা হচ্ছে এখন রাজধানী থেকেই। আরার রিপোর্ট আদান প্রদান সহজ ও স্বল্প সময়ে করা হয় ইন্টারনেটের কল্যাণে। আবার মানুষ নানা রকম সমস্যার প্রতিবাদ ও ন্যায়সঙ্গত আলোচনা করতে পারছেন অবাধে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমে। সারা দেশের মধ্যে প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল সেবা শুরু হয় যশোর জেলায়। যশোরের অধীন কেশবপুর উপজেলার অবস্থান যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার সমান দূরত্বে। এই অবস্থানের কারণে কেশবপুর উপজেলা আলাদা গুরুত্ব বহন করে আসছে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ঐতিহ্যের দিক দিয়েই কেশবপুর দেশের ভেতর তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারেও পিছিয়ে নেই কেশবপুর। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে ১৩টি ডিজিটাল সেন্টারে ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সাধারণ মানুষ এ সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় কাজ করছেন।
×