ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ প্রতিষ্ঠান এ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবায় আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

৩০ প্রতিষ্ঠান এ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবায় আসছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাইড শেয়ারিং নীতিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবায় দূর হলো সব রকমের বাধা। অন্তত ৩০ প্রতিষ্ঠান দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে বৈধভাবে পরিবহন সেবা চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) বলছে, যেকোন প্রতিষ্ঠান এখনই লাইসেন্স নেয়ার আবেদন করতে পারবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে গাড়ি পরিচালনার লাইসেন্স দেয়া হবে। ফলে গণপরিবহন সঙ্কট কমবে। পাশাপাশি অটোরিক্সার কাছে সাধারণ মানুষের জিম্মিদশাও কমে আসবে। গেল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। তবে নতুন নীতিমালায় সর্বনি¤œ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে জটিলতা থেকেই গেল। উবার, পাঠাওসহ বেসরকারী পরিবহনে যাত্রীসেবায় শৃঙ্খলা আনতে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। যা ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সেই আলোকেই বাংলাদেশে এই সেবা চালু হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই এই সেবা দেয়া যাবে। সার্ভিসটি পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে সনদ নিতে হবে। মোটরযানের মালিক এই সার্টিফিকেট নেবেন। ১১টি শর্ত মেনে এই সেবা দেয়া যাবে। তবে এজন্য সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে একটা লাইসেন্স নিতে হবে। পরে সেটা নবায়ন করতে হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়ার জন্য যে নীতিমালা আছে এ ধরনের রাইডিংয়ের ক্ষেত্রেও সেই নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ হবে। পাঠাও সার্ভিসের মতো মোটরসাইকেলের মাধ্যমেও এই সেবা দেয়া যাবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ করলে সনদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে শান্তি পাবে। মোবাইল এ্যাপভিত্তিক যাত্রী সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খসড়া তৈরি শুরু করে বিআরটিএর। বিআরটিএ-এর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি এই খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। গত ২১ জুন এটি বিআরটিএ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ নবেম্বর ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন দিয়ে যাত্রী সেবা দেয়া শুরু করে মোবাইল এ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উবার। তার আগে একইভাবে মোটরসাইকেলে যাত্রী সেবা দেয়া শুরু করে স্যাম। পরে আসে পাঠাও। এরপর উবারের সেবা কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিআরটিএ পক্ষ থেকে তাদের সেবা বন্ধ রাখতে সাংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যদিও উবার তা মানেনি। এরপর পরই দাবি ওয়ে এ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবার বৈধতার। অর্থাৎ নীতিমালার। যার আলোকে নীতিমালা চূড়ান্ত করে সরকার। এছাড়া হ্যালো, চলোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ্যাপ ভিত্তিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এ্যাপস সেবায় নিয়োজিত একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, ছোট বড় মিলিয়ে রাজধানীতে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় নেমেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কতগুলো প্রতিষ্ঠান মাঠে নামবে বা শর্ত পূরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম তাই দেখার বিষয়। যে কোন প্রতিষ্ঠান আবেদনের সুযোগ পাবে ॥ নীতিমালা অনুমোদনের পর যে কোন প্রতিষ্ঠান এ্যাপ ভিত্তিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এখন বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনের সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, আবেদন নিষ্পত্তির কোন সময় সীমা নেই। যে কোন প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে তা যাচাই বাছাই করার জন্য একটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাগজপত্র পরীক্ষা ও শর্তগুলো মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তারপর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অনুমোদন দেয়া হবে। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে জটিলতা না থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হবে। পাঁচ ধরনের সেবা ॥ নীতিমালা অনুযায়ী মোটর কার, জীপ, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সা, এ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেল এই পাঁচ ধরনের যান সেবা দিতে পারবে। বিআরটিএ’র হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩০ লাখের কিছু বেশি। রাজধানী ঢাকায় ১১ লাখ। এর অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল। আর রাইড শেয়ারিং সার্ভিস হিসেবে পরিচালনা করা যাবে এমন যান ৮৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাইভেটকার, জীপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের মতো ছোট ছোট মোটরযানের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হয়। তদুপরি মহানগরীতে যাত্রী চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় স্বাভাবিক যাত্রী সেবা ব্যাহত হয়। বিশ্বের বহু দেশে ইন্টারনেট ভিত্তিক সফটওয়্যার এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করে ব্যক্তিগত গাড়ি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। তবে নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠান এ্যাপ সেবার জন্য নতুন গাড়ি নামাতে পারবে না। তাছাড়া এক বছর ব্যবহার হয়েছে এমন পরিবহন সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ্যাপ সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন অফার নিয়ে হাজির হচ্ছে মালিক ও চালকদের কাছে। যারা যত বেশি সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে তাদের কাছেই গাড়ি ও নিবন্ধিত চালকরা যাবেন এমন প্রতিযোগিতা চলছে এখন গাড়ির রাজ্যে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। এ্যাপভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ হলে গণপরিবহনে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে। ইতোমধ্যে অটোরিক্সা চালক-মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। বিআরটিএর এক পরিচালক বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ট্যাক্সিক্যাব এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সা খাতে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। শুরুতেই অনিয়ম, চাহিদার তুলনায় সংখ্যায় কম হওয়া এবং আইনের প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে অটোরিক্সায় দৌরাত্ম্য চলছে। এছাড়া বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নৈমিত্তিক। সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে নৈরাজ্য। নীতিমালার পর এ্যাপভিত্তিক সেবা বাড়লে গণপরিবহনে অনেক বিকল্প হবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে। ভাড়ায় নীতিমালা ॥ রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় পরিবহন ভাড়া নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে। কেমন ভাড়া হবে। এ নিয়ে রয়েছে নানা কৌতূহল প্রশ্ন। অনুমোদিত রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী উবার, পাঠাওয়ের মতো এ্যাপে চলা গাড়িগুলোকে এখন থেকে ২০১০ সালের ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস নীতিমালা মেনে ভাড়া নিতে হবে। নীতিমালা অনুমোদন করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে উবার ও হ্যালো। বিআরটিএ বলছে বেশি ভাড়া গুণতে হবে না। কারণ ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় এসি গাড়ির জন্য প্রথম দুই কিলোমিটার ৬০ টাকা এবং নন-এসি গাড়ির জন্য ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আছে। নির্ধারিত এই ভাড়াকে সর্বোচ্চ ভাড়া জানিয়ে বিআরটিএ জানিয়েছে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। তাই এ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার স্বার্থে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণের সুযোগ আছে। যাত্রীদের বিভ্রান্তি দূরে করে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালার ভাড়া সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের কোথাও সর্বনিম্ন ভাড়া লেখা নেই জানিয়ে উবার, পাঠাওয়ের যাত্রীদের আশ্বস্ত করেছেন বিআরটিএর সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর বর্তমান ভাড়া এবং ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালায় নির্ধারিত ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উবার, পাঠাও এগুলো আগে নীতিমালা ছাড়াই চলেছে। সেজন্য তারা নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে। সেটা কম করেছে নাকি বেশি করেছে সেসব নিয়ে আমাদের আইডিয়া নাই। এখন ভাড়া হবে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালা অনুযায়ী। এই নীতিমালায় সর্বোচ্চ ভাড়া সীমা দেয়া আছে, সর্বনিম্ন ভাড়া সীমা দেয়া নাই। সর্বোচ্চ ভাড়ার নিচে কেউ ৩০ টাকা, ৪৫ টাকা দিলেও কোন সমস্যা নাই। তবে নীতিমালা হওয়ার পর রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সরকারী ফি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের আওতায় এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন ট্যাক্স দিতে হবে-ফি দিতে হবে, নবায়ন ফি দিতে হবে, এনলিস্টমেন্ট ফি দিতে হবে। কাজেই খরচও বাড়বে।
×