ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর প্রাণে যে উষ্ণতা, যে আবেগ তার সিংহভাগ ধারণ করে আছে ক্রিকেট। এই একটি খেলা থেকে যে কেউ স্বীকার করবেন, অনেক অর্জন। আর এ অর্জনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম। হোম অব ক্রিকেটে বাঙালীর হাসি কান্নার, আহা, কতশত গল্প রচিত হয়েছে! অথচ এই তো সেদিনের কথা, পড়ে থাকা পুরনো মাঠটি নিয়ে কাজ শুরু করল বিসিবি। আন্তর্জাতিক মানে গড়ে নেয়া হলো এটিকে। তার পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে ম্যাচ। এ ধারাবাহিকতায় বুধবার শের-ই বাংলা স্পর্শ করল নতুন মাইলফলক। এদিন এখানে অনুষ্ঠিত হলো শততম ওয়ানডে ম্যাচ। ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ল মিরপুর। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে আয়োজনের তালিকায় এই মাঠ রয়েছে ছয় নম্বরে। ঘটা করে উদ্যাপন করা না হলেও, বড় উপলক্ষ বটে। ফেলে আসা দিনের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করছেন ক্রিকেটাররা। দর্শকরাও আপ্লুত। মিরপুরে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ওডিআই। ডেব্যু ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ লড়ে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। নিজের মাঠে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা জয় তুলে নেয় যথারীতি। সেইসঙ্গে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেমন এগিয়ে গেছে, তেমনি বেড়েছে মিরপুরের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের সংখ্যা। ম্যাচগুলো ঘিরে সে কী উত্তেজনা! আবেগী বাঙালী গ্যালারিজুড়ে আনন্দের ঢেউ তুলেছে। আবার নীরবে ফেলেছে চোখের জল। ম্যাচ জেতার সাক্ষী শের-ই বাংলা। জিততে জিততে হেরে যাওয়ার বেদনাও ভুলেনি। টাইগাররা এখানে সবচেয়ে বেশি ৮৪টি ওয়ানডে খেলেছে। পাঁচটি সেঞ্চুরিসহ পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৩২ রানও এসেছে এই মাঠে খেলেই। হিটার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল করেছেন ২ হাজার ৩৮৯ রান। ১০৬ উইকেটের মালিক হয়েছেন বিশ্বখ্যাত তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার। কত ক্রিকেটারের ডেব্যু হয়েছে! অনেকে খেলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি। এভাবে স্বতন্ত্র আবেগ ভালবাসার তীর্থ হয়ে উঠেছে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম। আগামী দিনগুলোতে হোম অব ক্রিকেট আরও অর্জনের সাক্ষী হবে। ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালীর তা-ই প্রত্যাশা। প্রণব মুখার্জির কথা বলতে হবে। ভীষণ শ্রদ্ধার মানুষ। বড় ভালবাসার মানুষ। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু। সব সময় পাশে ছিলেন। বর্ষীয়ান নেতা এখন অবসরে। দীর্ঘকাল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। সরকারে ছিলেন। তার পর ইতি টেনেছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের। বর্তমানে নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন। এরই ফাঁকে গত রবিবার আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলে বাংলাদেশে। গত কয়েকদিন শহর ঢাকার অতিথি হয়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার নিজ দেশে ফিরে গেছেন তিনি। তবে যে কদিন ছিলেন শীত তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ভালবাসার উষ্ণতা ঘিরে ছিল বাঙালী বাবুকে। নানা উৎসব অনুষ্ঠান আড্ডায় মেতে ছিলেন তিনি। যোগ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি। প্রণব বাবুর বাংলায় দেয়া ভাষণ মুগ্ধ হয়ে শুনেন উপস্থিত সবাই। অভিজ্ঞতার আলোকে চমৎকার বলেন তিনি। ১৯ মিনিটের বক্তৃতা। প্রণব মুখার্জী বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দূষণ মানুষের চিন্তা ভাবনায়। মনে ও কাজে। এ দূষণ দূর করে নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন শুধু শিল্পী-সাহিত্যিকরা। দিগি¦জয়ী বীরেরা নয়, সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক তথা শিল্পীরা। পরীক্ষায় পাসের জন্য দিগি¦জয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবির কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনও ভোলা যায় নাকি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয় তা কখনও ভুলতে পারি আমরা? যুদ্ধের বিরুদ্ধেও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি। বাঙালী ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলেন। সব মিলিয়ে উপভোগ্য। অনেকদিন মনে রাখার মতো। সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেয়া ছাড়াও তিনি সাক্ষাত করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্বটি ছিল বরাবরের মতোই বিশেষ আবেগঘন। এর বাইরে মহৎপ্রাণ মানুষটিকে ঘিরে গল্প আড্ডায় মেতেছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। সফরটির কথা নিশ্চয়ই মনে রাখবে ঢাকা। গত সপ্তাহজুড়েই ছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আলোচনা। ক্রমে গরম হচ্ছিল রাজনীতির মাঠ। আর ঠিক তখনই যেন এক গামলা জল ঢেলে দিল হাইকোর্টের রায়। স্থগিত হয়ে গেল নির্বাচন। উপনির্বাচন স্থগিত হলো বটে। মুখরোচক গল্প থেমে নেই। যে যার মতো করে ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করছেন। পপুলার আলোচনা এই যে, সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ নির্বাচন চায় না। নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থী পরাজিত হবেন। আসলেই কি তাই? জবাবে অন্য অংশটি বলছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাগলপ্রায় বিএনপি নেতারা এসব প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে, সাধারণ মানুষ তা জানে। তারা এর সুফল পাচ্ছে। তাদের বক্তব্যÑ ঢাকা শহর নিয়েও বড় পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা আনিসুল হকের মতো কাজের মানুষকে মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি আজ নেই তবে ঢাকা উত্তরের চেহারা পাল্টে দিয়ে গেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই নতুন পছন্দ আতিকুল ইসলাম। তিনিও সফল ব্যবসায়ী। পরিচ্ছন্ন ইমেজের। কাজ কীভাবে করতে হয়, জানা আছে তার। কিন্তু সে সুযোগ তিনি কি পাবেন? কে হবেন নতুন মেয়র? উত্তরটি এক্ষণই পাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তবে ঢাকা উত্তরের অনেক কাজ থমকে আছে। নির্বাচনটি জরুরী। জরুরী যে, এ ব্যাপারে সকলেই একমত বলে মনে হয়।
×