ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যপদ ও বেকারত্ব

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

শূন্যপদ ও বেকারত্ব

একদিকে শূন্যপদ, অন্যদিকে বেকারত্বের বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগজনক বৈকি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পরিবেশিত এক তথ্যে জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন পদে শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি। অথচ দেশে উচ্চশিক্ষিত তথা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, নবম থেকে ১২ গ্রেডের অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শূন্যপদ পূরণ করা হয় পিএসসির মাধ্যমে। অন্যদিকে ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের অর্থাৎ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর পদ পূরণ করা হয় স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবিধির মাধ্যমে। সেখানে চলে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, আর্থিক লেনদেন, সর্বোপরি প্রশ্নপত্র ফাঁস। সম্প্রতি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে পিএসসিতেও দুর্নীতি-অনিয়ম-অভিযোগের অন্ত নেই। সর্বাধিক জট ও জটিলতা সৃষ্টি হয় জনবল নিয়োগে কোটা প্রথা নিয়ে। ৩৬তম ও ৩৭তম বিসিএস ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থীর অভাবে বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যথাক্রমে ৩৬৬টি এবং ৭৬১টি পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে পিএসসি। উল্লেখ্য, এসব পদই ডাক্তার, কৃষি, প্রকৌশলী, মৎস্য, পশুপালন, শিক্ষক ইত্যাদি পদের। ২০১০ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জারিকৃত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলেও পদগুলো শূন্য রাখতে হবে। অনুরূপভাবে মহিলা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জেলা পর্যায়েও যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রশাসন ক্রমশই মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর অভাবে আক্রান্ত হচ্ছে পুষ্টিহীনতায়। এর ফলে সরকারী কার্যক্রমে গতিশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সে অবস্থায় কোটা প্রথার সংস্কার জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সরকার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সর্বাগ্রে মনোনিবেশ করে খাদ্য উৎপাদনে। পরিকল্পিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। আয়ও অসামান্য। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃজন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। বর্তমানে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বৈচিত্র্য ও বহুমুখিতা কম। সেক্ষেত্রে ধান-চালের পাশাপাশি কৃষির বহুমুখীকরণ তথা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। ভারি ও বহুমুখী শিল্পায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংক-বীমাসহ কারিগরি উৎকর্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে দেশেই। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে ধর্মীয় কূপম-ূকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শূন্যপদ পূরণে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোটা প্রথার পুনর্বিন্যাসও প্রয়োজন।
×