ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরহংকারী শিল্পী ছিলেন শাম্মী আক্তার

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

নিরহংকারী শিল্পী ছিলেন শাম্মী আক্তার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গানের পাখি, সুরের পাখি শাম্মী আক্তারের প্রয়াণে শোকে ভাসছে সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা। মঙ্গলবার তার মৃত্যুর সংবাদে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী, সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা, তিমির নন্দী, সুবীর নন্দী, কুমার বিশ্বজিৎ, খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম, তপন মাহমুদ, সামিনা চৌধুরী, আসিফ আকবরসহ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা। স্মৃতিচারণ করে তারা বলেছেন একজন ভাল মানুষের পাশাপাশি একজন নিরহংকারী শিল্পী ছিলেন শাম্মী আক্তার। স্বাধীন বাংলাদেশের আগেই শিল্পী হিসেবে শাম্মী আক্তারের যাত্রা শুরু হলেও সুকণ্ঠী গায়িকা হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তৎকালীন সময়ে বেতারে প্রায়শই শোনা যেত তার সুমধুর কণ্ঠ। সেই সুবাদে একটা সময়ে তিনি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকে নিয়মিত হন। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে অসংখ্য নন্দিত গান উপহার দিয়েছেন এই জাতশিল্পী। আজন্ম এই সঙ্গীত শিল্পীর প্রয়াণে সঙ্গীতাঙ্গন তথা সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে ভাসছেন দেশের অগণিত ভক্ত শ্রোতা। এ শিল্পীর প্রয়াণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা। শিল্পী খুরশীদ আলম বলেন, স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের যে কয়েকজন শিল্পী তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন শাম্মী আখতার তাদের একজন। তিনি যে মানের শিল্পী ছিলেন, তার মধ্যে তার কোনো গর্ববোধ ছিল না। তিনি সবাইকে যার যার প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করতেন। রফিকুল আলম বলেন, শিল্পীতো অনেকেই আছেন, কিন্তু শাম্মী আক্তারের মতো গুণী শিল্পী সৃষ্টি হওয়া কঠিন। তপন মাহমুদ বলেন, তিনি শিল্পী হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার শিল্পীত্বের চেয়ে তিনি বড় ভাল মানুষ ছিলেন। তার অকাল প্রয়াণে সঙ্গীতভুবনে অসামান্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ‘বৈদেশ গিয়া বন্ধু’, ‘ওই রাত ডাকে, ওই চাঁদ ডাকে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান একসঙ্গে গেয়েছেন শাম্মী আক্তার ও সুবীর নন্দী। প্রিয় সহশিল্পীর প্রয়াণে সুবীর নন্দী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের একসঙ্গে ঢাকার জীবন শুরু হয়েছিল। তার স্বামী একরামুল ইসলামের সঙ্গে সেই ৬২ সাল থেকে আমার বন্ধুত্ব। পারিবারিকভাবেই আমাদের বন্ধন ছিল। একসঙ্গে অসংখ্য জনপ্রিয় গান করেছি। এত বয়স হয়েছে এত অসুস্থতা কিন্তু পুরো সঙ্গীতজীবনে একই মাপে গান গেয়ে গেছেন তিনি। কণ্ঠ একটুও নড়চড় হয়নি। প্রতিটি সঙ্গীত পরিচালক তার সঙ্গে কাজ করে খুশি হতো। সুবীর নন্দী বলেন, নিরহংকারী শিল্পী ছিলেন শাম্মী আক্তার । তার মতো এত নিরহংকারী শিল্পী আর হয় না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভাল ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে এক ঘন্টা যে কথা বলতো তাকে আর ভুলতো না। এত আন্তরিক একজন মানুষ ছিলেন। সামাজিকভাবে তার মতো এত ভালো মানুষ খুব কমই আছে। সহশিল্পী হিসেবে দুজনের মধ্যে ছিল মজার সম্পর্ক। একে অপরকে ডাকতেন নানী-নাতিন সম্বোধনে। শাম্মী আক্তারের প্রয়াণে সহশিল্পী-বন্ধু হারানোর শোকে কাতর সুবীর নন্দী বলেন, কিছু ভাল লাগছে না। সবার কাছে প্রার্থনা চাইবো তার আত্মা যেন শান্তি পায়। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর শাম্মী আক্তারকে মমতাময়ী মা উল্লেখ করে লিখেছেন, অপ্রত্যাশিত আঘাত, কেউ আর আদর করে বলবে না- ভাইডি কেমন আছিস, তোর বউ বাচ্চা কেমন আছে। অসম্ভব মায়াবতী আমাদের শাম্মী আপা (মরহুম শাম্মী আকতার) আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের বাইরে তিনি ছিলেন আমাদের মমতাময়ী মায়ের মতো অভিভাবক। শাম্মী আপা মহান আল্লাহ আপনার আত্মার শান্তি দিন, আপনার পরিবারের শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দিন। আমীন খালিদ হাসান মিলুর ছেলে প্রতীক হাসান লিখেছেন, প্রিয় শিল্পী শাম্মী আকতার আপু আর আমাদের মাঝে নেই। সঙ্গীত শিল্পী শাহরিয়ার রাফাত লিখেছেন, আমাদের সবার প্রিয় গুণী শিল্পী ও মানুষ শাম্মী আখতার আপা আর নেই। সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজারভিশনের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আক্তার ইন্তেকাল করেছেন। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা লেজারভিশন পরিবার গভীর শোকাহত। তার সৃষ্টিশীল কর্মের মাঝে তিনি চির অম্লান হয়ে থাকবেন। আরজে সায়েম সালেক তার সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণে লিখেছেন, তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার টিভি শো করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, একদিন শো’র ব্রেকে আম্মার সঙ্গে তার কথা বলিয়ে দিয়েছিলাম, আম্মা সেইদিন কি খুশি অসাধারণ ভাল শিল্পী এবং মানুষ তিনি। আন্টি, ভাল থাকবেন ঐ পারে। সঙ্গীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ লিখেছেন, বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আক্তারের চলে যাওয়াতে রেশ পরিবার শোকাচ্ছন্ন। আল্লাহ ওনার আত্মার শান্তি দিন। এভাবে শাম্মী আক্তারকে হারানোর শোকে এমনই সব আবেগঘন স্মৃতিচারণ আর দোয়া প্রার্থনায় ভেসে যাচ্ছে ফেসবুক। সত্তর দশকের এই গায়িকা তার গাওয়া বিভিন্ন গানের মাঝে বেঁচে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। প্রসঙ্গত ৬২ বছর বয়সী শিল্পী শাম্মী আক্তার ছয় বছর ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বিকেল ৪টার দিকে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। শাম্মী আক্তারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে তার পরিবারের সদস্যরা।
×