ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যমন্ত্রী

দেশে মাংস আমদানির প্রয়োজন নেই, উৎপাদন হয় অতিরিক্ত

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

দেশে মাংস আমদানির প্রয়োজন নেই, উৎপাদন হয় অতিরিক্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর পরও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যারা এই মাংস আমদানি করছে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার সচিবালয়ে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ-২০১৮’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে বছরে মাংসের চাহিদা ৬৯ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদার চেয়ে দুই লাখ মেট্রিক টন বেশি অর্থাৎ ৭১ লাখ মেট্রিক টন মাংস দেশে উৎপাদন হয়। মাংসের দাম আরও কমিয়ে আনতে দেশে নতুন জাতের গরু আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা এই জাতের একটি গরু থেকে এক মেট্রিক টনের মতো মাংস পাওয়া যায়। ‘ব্রাহমা‘ জাতের এই গরু থেকে মাত্র পাঁচ বছরে এক মেট্রিক টন মাংস পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি উন্নত জাতের ভেড়ার চাষও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে মন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত থেকে মাংস আমদানির প্রয়োজন নেই। কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী কম দামে মাংস আমদানি হচ্ছে, এ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও মাংস না আনার পক্ষে। সরকারীভাবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, মাংস আমদানি করব না। বছরে আমাদের ৭৯ লাখ টন মাংস প্রয়োজন কিন্তু আমাদের অলরেডি ৭১ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে। মাংস আনলে আমাদের খামারিরা মারা পড়বে। এই শিল্পটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমদানি নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশে মাংস আমদানিতে বাধা নেই। আমদানি হচ্ছেও, সেটা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা- এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমরা (মাংস আমদানি) চাচ্ছি না এবং এতে (মাংস আমদানিতে) যদি আইনে বাধা না থাকে, তবে সেটা প্রতিরোধ করতে হবে, আইন পরিবর্তন করতে হবে। সুযোগ থাকলে সেই সুযোগ রোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, আমদানি নীতির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের মতামত চেয়েছে, আমরা বলেছি, মাংস আমদানি করার দরকার নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বেশি দামে মাংস খাচ্ছি এটা বড় বিষয় নয়। এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এখন সাড়ে ৫ লাখ লোক গবাদিপশু পালন করছে। এই বাজারটা নষ্ট করে ফেললে আমাদের সমাজটা কোন অবস্থায় পড়বে, এটা একটা চিন্তার বিষয়। উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে নারায়ণ চন্দ্র বলেন, আমরা সচেতন আছি জনগণ যাতে স্বল্প ও ন্যায্যমূল্যে মাংস খেতে পারে এবং খামারিরা টিকে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু আমাদের দেশে আনা হয়েছে, আমাদের দেশে বাচ্চা হয়ে ২ বছরে ৪০০ কেজিতে পৌঁছেছে। এই জাতের গরুতে এক টন (এক হাজার কেজি) পর্যন্ত মাংস হয়। মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অধিক ওজনের গরুগুলোর দিকে নজর দিচ্ছি। চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে মাংসের দাম বেড়েছে বলে মাংস ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছেন। এ বিষয়ে কোন সক্রিয় উদ্যোগ বিবেচনায় আছে কি না- জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু এককভাবে আমাদের মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে না। এরসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জড়িত। এই ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আমরা পদক্ষেপ নেব। ভ্যাটেরিনারি হাসপাতালে মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা সঠিকভাবে পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা সেবামুখী। কিন্তু লোকবল সঙ্কট রয়েছে, আমাদের জনবল বাড়ানো দরকার।
×