ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে ওই নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার দরকার হলে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও আদেশ দেয়া হয়। বুধবার একটি রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুই যুগ ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসনকে বাধ্য করতে ২০১২ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন ২৫ শিক্ষার্থী। আদালত তখন রুল দিয়ে জানতে চেয়েছিল, ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের কাছে এই জবাব চাওয়া হয়েছিল। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি বুধবার আদেশের জন্য রাখে। রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করবেন। অথচ ১৯৯১ সাল থেকে ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ওই অর্ডার অনুসারে সিনেটে ডাকসুর প্রতিনিধি থাকবেন। ডাকসুর প্রতিনিধি না থাকায় সিনেটের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। ছয় বছর আগে নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গত ৩০ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়াকে কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। ২৫ শিক্ষার্থীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ সালের পর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ঢাবি কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন আইন অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে। তাই যথাসময়ে নির্বাচন করার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়। রিটের আগে ডাকসু নির্বাচনে পদক্ষেপ নিতে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের কোনো জবাব না দেয়ায় ওই বছরই ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে উক্ত রুলের জবাব দেয়ার জন্য বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেন। এই রুলের ওপর মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। বুধবার এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে। রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর এর সময়সীমা হবে এক বছর। পরবর্তী তিন মাস নির্বাচন না হলে বিদ্যমান কমিটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের পর ডাকসু ভেঙ্গে দেয়া হয়। ডাকসু বিধান অনুযায়ী প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রায় ২২ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের এ ব্যর্থতার কারণে হাজারো শিক্ষার্থী তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
×