ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স সাড়ে ১২ বছর পুনর্নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স সাড়ে ১২ বছর পুনর্নির্ধারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনার ন্যূনতম বয়স সাড়ে ১২ বছর পুনর্নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয় এ সংশোধিত পরিপত্র জারি করে। পরিপত্র অনুযায়ী এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনার বয়স ৩০ নবেম্বর ১৯৭১ সালে কমপক্ষে সাড়ে ১২ বছর হতে হবে। গত বছরের ১৯ অক্টোবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৫০তম বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার এ পরিপত্র জারি করেছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুন জারি করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৭৭২ স্মারকের পরিপত্র অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনার ন্যূনতম বয়স ছিল ১৩ বছর। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স ১৩ বছর থেকে কমিয়ে সাড়ে ১২ বছর করার উদ্যোগ নেয় জামুকা কর্তৃপক্ষ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সম্মানী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বৈঠকে জানানো হয়। তখন জামুকার চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে এ বিষয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, অন্যথায় নয়। সূত্র জানায়, ৫০তম বৈঠকে জামুকার সদস্যরা প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ৬ মাস কমানোর বিষয়ে একমত হন। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স ছিল ১৫ বছর। ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত জামুকার ৩০তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৬ সালের ৮ নবেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমার্জনের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদন উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বয়স প্রমার্জন না করায় সারা দেশের প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বন্ধ রাখা হয়। এমনকি তাদের সন্তানদের সরকারী চাকরিও আটকে রয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে প্রায় প্রতিটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে একাধিক আবেদন উপস্থাপন করা হতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বয়স ১৩ বছর থেকে কমিয়ে সাড়ে ১২ বছর করার প্রস্তাব করেন একজন সদস্য। বিষয়টি সমর্থন করে একাধিক সদস্য বলেন, যারা জামুকা পর্যন্ত আসতে পারেন তারাই শুধু আবেদন করছেন। কিন্তু যারা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন তারা জামুকা পর্যন্ত আসতে পারেন না। তাই তাদের হয়রানির ব্যাপারে আমরা অবহিত নই। জানা গেছে, অধিকাংশ আবেদনেই দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রমার্জন চাওয়া হয়েছে। জামুকার আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন এ বিষয়ে আপত্তি তোলেন। তাদের যুক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স যখন ১৫ বছর করা হয়েছিল তখন ১৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম লালু, ১৪ বছর বয়সী তারামন বিবি ও আবু সালেকের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এছাড়া কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য লালু মিয়া ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন এবং বীরপ্রতীক খেতাবও পান। অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের বয়স ১৫ বছরের বেশি থাকলেও এসএসসির সনদে বয়স কম দেখানো হয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত জামুকার ৩০তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়স ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে ১৩ বছরের কম কোনভাবে বিবেচনার সুযোগ নেই। তবে ওই তারিখে ১৩ বছরের ২ থেকে ৩ মাস কম বয়সী কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকলে আবেদনভিত্তিক বাস্তবতা যাচাই করে বয়স কমানোর বিষয়টি জামুকা সভায় উপস্থাপন পূর্বক বিবেচনা করা যেতে পারে। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামুকার ৩২তম সভায় ১১টি আবেদন উপস্থাপন করা হলে তাদের বয়স প্রমার্জনের ক্ষমতা জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে দেয়া হয়। পাশাপাশি লাল মুক্তিবার্তায় উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমার্জনের জন্য সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের সাব-কমিটি করা হয়। কমিটির প্রথম বৈঠকে বয়স প্রমার্জনের মোট ৩২টি আবেদন উপস্থাপন করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ প্রায় দুই বছর পর্যন্ত ২৪ জনের বয়স কমানোর সুপারিশ করে কমিটি। এ ২৪ জনের বিষয়টি জামুকার ৩৩তম বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে ১৩ জনের বয়স কমানো হয়। এরপর থেকেই প্রায় প্রতিটি বৈঠকে উল্লেখযোগ্য হারে বয়স প্রমার্জনের আবেদন আসতে থাকে। এ অবস্থার মধ্যে প্রয়োজনের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির বয়স আরও ৬ মাস কমালো জামুকা।
×