ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যসেন-প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন করলেন প্রণব

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

সূর্যসেন-প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন করলেন প্রণব

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্যসেন ও বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন এবং বিপ্লবীদের আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে অনেক আবেগ নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় রওনা হন বাংলাদেশের অকৃত্রিম এই বন্ধু। আগের দিন রাতে হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত সংবর্ধনায় তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম না দেখলে আমার বাংলাদেশ সফর পূর্ণতা পেত না।’ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল রেডিসন থেকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে যান। সেখানে তিনি পরিদর্শন করেন অস্ত্রাগার। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা এই অস্ত্রাগার দখল করে নিয়েছিল। ঐতিহাসিক এই স্থাপনা পরিদর্শনকালে তাঁকে সার্বিক বিষয় অবহিত করেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার দেবদূত মজুমদার। এরপর তিনি পরিদর্শনে যান পাহাড়তলীতে অবস্থিত সেই ইউরোপিয়ান ক্লাব। বীরকন্যা প্রীতিলতা এই ক্লাবে আক্রমণ চালিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে। ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি আত্মাহুতি দেন। সেখানে রয়েছে প্রীতিলতার আত্মাহুতির ইতিহাস সংবলিত একটি স্মৃতিফলক। ভবনটির সামনের সড়কে স্থাপিত আছে প্রীতিলতার আবক্ষমূর্তি। প্রণব মুখার্জী ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দেখে আবেগাপ্লুত হন। কাঠের কাঠামোয় শৈল্পিক স্থাপত্যে নির্মিত ক্লাবটি তিনি ঘুরে দেখেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের অস্ত্র রাখার স্থানটিও প্রত্যক্ষ করেন। প্রণব মুখার্জী সেখানে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রণব মুখার্জীর এই পরিদর্শনকালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম সফরে এসে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন দেখে তিনি যুগপৎ মুগ্ধ এবং আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রণব মুখার্জী ইউরোপিয়ান ক্লাবে যাওয়ার আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী। সাংবাদিকদের কাছে এইসব ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ এবং দর্শনীয় স্থাপনায় পরিণত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ক্লাবকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। সেখানে রাখা হবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাক্ষ্যপ্রমাণ। এছাড়া রাউজানের শেষ সীমানা চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) পর্যন্ত রেল লাইন হবে। সেখানে যে স্টেশনটি নির্মিত হবে তার নামকরণ হবে মাস্টারদা সূর্য সেনের নামে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী দু’দিনের সফরে চট্টগ্রামে আসেন ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার। নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে অবস্থান করেন তিনি। সেখান থেকে সকালে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মাননাসূচক ডি.লিট ডিগ্রী গ্রহণের পর তিনি যান রাউজানের নোয়াপাড়ায় মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মভিটায়। এই বিপ্লবীর আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বাড়ি পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় নগরীতে ফিরে আসেন। রাতে রেডিসনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তাঁর কণ্ঠে বেরিয়ে আসে আবেগঘন বক্তব্য। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে না এলে আমার বাংলাদেশ সফর অপূর্ণ থেকে যেত। কারণ, এই চট্টগ্রাম শুধু দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দরই নয়, অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রামের মানুষ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও চট্টগ্রামের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়। ইচ্ছে ছিল চট্টগ্রামে একবার যাব। বয়স হয়ে যাচ্ছে। না গেলে হয়ত আর যাওয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছা, ঈশ্বরের করুণায় তা হলো।
×