‘মানুষ মানুষের জন্য’ কতবার যে শুনেছি বাক্যটি তার ঠিক নেই। কিন্তু শেষ কবে হৃদয় দিয়ে কথাটির মর্মার্থ উপলব্ধি করেছি? মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু সামাজিক দায়িত্ববোধ থাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে কিছু মানবিক দায়িত্বও রয়েছে। অপেক্ষাকৃত অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর জন্য কিছু করার তাড়না থেকেই মানবতাবাদের জন্ম। প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা কতটুকু সামাজিক দায়িত্ব পালন করছি?
এক প্রায়ই মধ্য রাতে বাইরে যাচ্ছিলাম একটা কাজে। ‘কোন জ্যাকেটটা পরলে স্মার্ট লাগবে’ এই ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতে ঘণ্টাখানেক শেষ করে ফেললাম! শীত উপভোগ করার উদ্দেশ্য নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছিলাম। বেশকিছু দূর যাওয়ার পরে লক্ষ্য করলাম- দশ বারো বছরের এক ছেলে ফ্রী সাইজ গোল গলা একটা টি শার্ট দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। শীতের তোপে ঠক ঠক করে কাঁপছিল ছেলেটি। মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে দেখলাম। নিজের জ্যাকেটের দিকে তাকিয়ে, জ্যাকেট পছন্দ করায় ব্যয়কৃত এক ঘণ্টা এবং শীত উপভোগের কথা ভেবে নিজেরই লজ্জা হচ্ছিল। পাশের বহুতল ভবনগুলোর দিকে তাকালাম কয়েকবার। কি নিশ্চুপ, নিষ্ঠুর আরামে ঘুমিয়ে রয়েছে আমাদের সমাজ!
আমরা যখন খুব আরাম করে বাহারি কম্বলের নিচে সুখনিদ্রা দিচ্ছি, তখন খোলা আকাশের নিচে এই তীব্র শীতে ফুটপাথে শুয়ে কেউ তার একমাত্র পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আপনার ছোট্ট সোনামণির জন্য যখন আপনি বিলাসবহুল একাধিক স্টাইলিশ শীতবস্ত্র ক্রয় করছেন, আপনারই শহরের কোন এক কোণে হয়তো অসহায় কোন বাবা-মা তাদের সন্তানের শীত দূর করতে না পারার অসহায়ত্ব নিয়ে নীরবে চোখের জল মুছছেন। সমাজ হয়তো আপনাকে বেশি সুবিধা দিয়েছে, আর ওরা সুবিধাবঞ্চিত। কিন্তু ওদেরও বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার রয়েছে যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমার-আপনার, যারা সমাজ থেকে বেশি সুবিধা পাচ্ছি।
গত ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা দেশের ইতিহাসে এযাবতকালের সর্বনিম্ন। গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে প্রচুর শীত পড়েছে এবার। যারা দিন আনে দিন খায় তারা কাজের জন্য বাইরে বের হতে পারছে না। অনেক ধরনের রোগ-বালাইও ছড়াচ্ছে।
এই শীতে আপনার তো অনেক কিছুই আছে শীত নিবারণ করার মতো। আপনার আশপাশে একটু মানবিক দৃষ্টি নিয়ে তাকান। এমন অনেককেই পাবেন যাদের আসলেই সেরকম কিছুই নেই শীত দূর করার জন্য। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু একটা নিয়ে ওদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
আপনার দেয়া একটা কম্বলই হয়তো যথেষ্ট একটা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে।
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ বা পড়ালেখা করছেন অথবা আপনি যে ফ্ল্যাটে থাকছেন, ছোট পরিসরে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনার একার উদ্যোগে দেখবেন অনেকেই সাড়া দেবে। ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ না নিতে পারলে যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করুন। আমরা চাই না, আমাদের দেশের কোন মানুষ শীতে কষ্ট পাক। সবাই মিলে আসুন, একটু সদিচ্ছা নিজেদের মধ্যে তৈরি করার মাধ্যমে দেশটাকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলি। সবাই মিলে একসঙ্গে ভাল থাকি।
ঢাকা থেকে
শীর্ষ সংবাদ: