ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদুল ইসলাম

দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের তাপমাত্রা বেশি নিম্নগামী ও শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় রাজশাহী, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী জেলাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের প্রকোপ অন্য জেলার তুলনায় বেশি। বিগত বছরগুলোর শীত মৌসুমে রাজধানীবাসীকে খুব বেশি দুর্বল করতে পারেনি। কিন্তু এবারের কনকনে ঠাণ্ডা শীত শুধু রাজধানীবাসীকেই নয় গোটা দেশের মানুষকে কাঁপিয়ে তুলছে। শীত ও কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই মারাত্মক যে- রাজধানীতে সকাল বেলাও যানবাহনের হেডলাইটের আলো জ্বালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া হতদরিদ্র দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষ। হাড় কাঁপানো শীত ও টানা শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দী জীবনযাপন করছে। উত্তরাঞ্চলে মানুষের নিকট এ শীত উপস্থিত হয়েছে ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সেখানকার মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাদের কাছে দিনের বেলায় সূর্যের মুখটা দেখা আর সোনার হরিণ দেখা একই সমতুল্য। আবার দেশের কোথাও সূর্যের মুখটা দেখা দিলেও তাপমাত্রা আশানুরূপ বাড়ছে না। কনকনে শীতে রাত থেকে ভোরঅবদি সারাদেশটাকে কুয়াশার চাদরে ঢেকে ফেলেছে। ক্ষেত-খামার, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, শিল্প-কলকারখানাসহ দেশের সবধরনের প্রতিষ্ঠানেই কাজের গতি কিছুটা মন্থর। প্রচণ্ড কনকনে শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিকরা ঘর থেকে মাঠে নেমে চাষাবাদ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিক্ষেত্র। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে দেশে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিবে। ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট ও ফেরি চলাচলে বিঘœ হচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে ছিন্নমূল, ভবঘুরে মানুষ এবং গত বন্যায় ঘরবাড়িসহ সর্বস্ব হারানো নদ-নদীর তীরবর্তী পরিবারের মানুষগুলো। শীত শুধু জনমানবকে দুর্বল করেনি, দুর্বল করেছে প্রাণিকুলকেও। রাতের একটানা শীতে পুরো দেশটিকে মনে হয় একটি হিমাগার। সারাদেশের পথঘাটে কমেছে মানুষের চলাফেরা ও আড্ডা। মানুষ শীতের পোশাক পরিধান করেও পরিত্রাণ পাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলসহ অনেকস্থানে আগুন পোহানোর সময় শরীরে আগুন লেগে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত শীত পরিস্থিতির উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই। অনেক গরিব মানুষ অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে পারছে না এবং কাজেও যেতে পারছে না। মানবতার কল্যাণে শীতবস্ত্র বিতরণে সরকারী, বেসরকারী এবং ধনীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। শীত আসার আগেই যদি শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে দেশে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। সকল বয়সের মানুষই শীতজনিত রোগে ভুগছে। প্রচণ্ড শীতে ঠাণ্ডা ও বৈরী আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও রোগে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দেশের সর্বত্রই দরিদ্র মানুষের মধ্যে বস্ত্রের জন্য হাহাকার বিরাজমান। দরিদ্র মানুষরাও আমাদের মতই রক্তমাংসে গড়া মানুষ। তাদেরও সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই আসুন- আমরা সকলে যার যার অবস্থানে থেকে সাধ্যমতো অর্থ ও শীতবস্ত্র দান করি। ‘মানুষ মানুষের জন্য’- এটাই হোক সবার ধর্ম। রামপুরা, ঢাকা থেকে
×