ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাস চন্দ্র রায়

স্থবির জনজীবনে চাই গতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

স্থবির জনজীবনে চাই গতি

মিডিয়ার কল্যাণে ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন দেশের একেবারে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা গত ৬৮ বছরের ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। উত্তরের ৫টি জেলায় এখন ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন কতটা স্থবির হয়ে পড়েছে তা চোখে না দেখলে অনুমান করা কঠিন। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে আমরা জেনেছি, এবার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২.৬ সৈয়দপুরে, ২.৯ কুড়িগ্রামে ৩.১ দিনাজপুরে ৩.২ রংপুরে ৪.৯ এবং বগুড়ায় ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ জানুয়ারির রেকর্ডকৃত এই তাপমাত্রা জানান দিচ্ছে, এবারের শীতের তীব্রতা কতটা ভয়াবহ, অসহনীয়। কেন কী কারণে এমন হাড় কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহ তা উল্লেখ করতে গিয়ে একটি সহযোগী দৈনিক লিখেছে এক. সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতলবায়ু এবার আগের চেয়ে শীতলতম। দুই. ৪০-৪৫ হাজার ফুট ওপরের জেট বায়ু এবার ৩০-৩৫ হাজার ফুট নিচে। তিন. এন্টি সাইক্লোন বা উল্টো ঘূর্ণাবর্ত নামে শীতল বায়ুপ্রবাহ বইছে। উল্লিখিত কারণের প্রভাব যে বাংলাদেশেও পড়ছে তা সহজেই বোঝা যায়। এখন প্রশ্ন হলো আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে কি মনে করছেন তা বিচার-বিবেচনা করা জরুরী। বিশেষজ্ঞদের অভিমত শত বছর ধরে কার্বন নিঃসরণ এবং প্রকৃতি ধ্বংস করে মানুষ উন্নয়নের নামে যা করছে এ হচ্ছে তারই ফল। অর্থাৎ সোজা ভাষায় প্রকৃতির প্রতিশোধ। মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যে আচরণ করছে প্রকৃতি ঠিক একইভাবে তার প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। প্রকৃতির প্রতিশোধ স্পৃহা জাগিয়ে দিচ্ছে মানুষ তার সব ধরনের বৈরী আচরণের মধ্য দিয়ে। মানুষ ভাবছে না এর পরিণতির কথা। এখন প্রকৃতির এই রূপ দেখে মানুষের যদি চৈতন্য হয় তবেই হয়ত তাদের রক্ষা অন্যথা প্রকৃতিকে বিষিয়ে তোলার নির্মম ফল মানবজাতিকে এভাবে একের পর এক ভোগ করতেই হবে। সুতরাং প্রকৃতির প্রতি মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা ভাববার বোধহয় এখনই সময়। অন্যথা মানব জাতির অস্তিত্ব যে চরম বিপর্যস্ত হবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। যার প্রমাণ এখন আমাদের সামনে বিদ্যামান। কোটি কোটি শিল্প-কলকারখানা যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া আবহাওয়া, বায়ুম-লকে এমন চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় নিয়ে গেছে যার ফলস্বরূপ এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখন আমরা লক্ষ করছি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সময়ে এখন এর মাত্রাতিরিক্ত তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এই যে অস্বাভাবিকতা এর জন্য দায়ী কিন্তু মানুষই। মানুষ তার নিজ স্বার্থে সব বোধ-বিবেচনা বিসর্জন দিয়ে প্রকৃতির প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে তার ভুক্তভোগী এখন হচ্ছে মানুষই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক একটি দেশ যেভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার বিস্তার ঘটাচ্ছে। যত্রতত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করছে তার কুফল তো মানুষকেই পেতে হবে, ভোগ করতে হবে। কতিপয় স্বার্থান্ধ মানুষের কারণে গোটা পৃথিবী আজ বিপন্ন হতে চলেছে। মানুষের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিশ্বের শত কোটির অধিক নিরপরাধ মানুষ গুটিকয় অমানুষের জন্য শাস্তি ভোগ করবে তা তো হতে পারে না। তাই বিবেকবান সব সচেতন মানুষের এখনই সোচ্চার হতে হবে প্রকৃতিকে ধ্বংসের চক্রান্ত রুখে দাঁড়াবার। বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলবার, বনভূমি উজাড় করে ইটভাঁটি, কলকারখানা, বাড়ি-ঘর নির্মাণ বন্ধের। এবার রেকর্ড পরিমাণ শৈত্যপ্রবাহের কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনপ্রবাহ কঠিন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষত চরম দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল, দরিদ্র মানুষ। জীবিকার সন্ধানে এখন তারা বের হতেও পারছে না, এভাবে কাটবে কতদিন? সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় শীতজনিত রোগে এ পর্যন্ত উত্তরজনপদে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বৃদ্ধ এবং শিশুই বেশি। এছাড়া দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোনিয়াসহ নানা জটিল রোগ। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ তাই উত্তরের, পঞ্চগড়ের একজন অধিবাসী হিসেবে প্রশাসনসহ সকল বিত্তশালীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের যেসব এলাকায় মানুষ দুর্বিষহ মানবেতর জীবনযাপন করছে শৈত্যপ্রবাহের কারণে, তাদের পাশে দাঁড়ান, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। শীতবস্ত্র, ঔষধ, চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখুন। এমন বিপর্যস্ত অবস্থায় তাদের জন্য সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন। আপনাদের উদার সহযোগিতায় তারা এ বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারে। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ অঞ্চলের মানুষই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এখানে কৃষির যে ক্ষতি হচ্ছে বিশেষ করে ধানের বীজতলা, আলুখেত এদিকেও বিশেষ নজর দেয়া জরুরী, এর নেতিবাচক প্রভাব শীতোত্তর সময়ে জনজীবনে বিশেষত স্বল্প আয়ের মানুষের অর্থাৎ কৃষকের জীবনের ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা করি। আটোয়ারি, পঞ্চগড় থেকে
×