ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ হাবিব উল্লাহ

ছিন্নমূল মানুষের বিপদ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

ছিন্নমূল মানুষের বিপদ

কথায় আছে মাঘের শীত বাঘের গায়ে। এবার কিন্তু মাঘ মাস আসার আগেই দেশের ৬০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে দিনাজপুরের, পঞ্জগড়ে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাঘ মাস আসার আগেই যখন শীতের নিদারুন অবস্থা তখন মাঘ মাস এলে এই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের সমান কিংবা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে কিনা এটা দেশবাসীকে অনেক ভাবিয়ে তুলছে। তাই তো শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে জরুরী হয়ে পড়েছে। ধনী-গরিব সবাইকে নিয়েই দেশ। দেশের ধনী সম্প্রদায় সুখে-শান্তিতে, আরাম-আয়েশে দিনযাপন করবে আর গরিবরা যথেষ্ট দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটাবে এটা ঠিক না। মানুষ মানুষের জন্য তাই এই নিদারুণ ঠা-ার দিনে গরিবরা বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কষ্ট পাবে এটা বড়ই করুণ ও অসহনীয় অবস্থা। এ বছর তাপমাত্রার অনেক হেরফের হয়েছে। আমেরিকা ও কানাডায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের এত নিচে নেমে এসেছে যে, সেখানকার জনজীবনে নেমে এসেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে এই শৈত্যপ্রবাহে বেশকিছু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। কানাডার অবস্থা আরও করুণ, আরও ভায়াবহ। শীতে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ের অনেক নিচে নেমে এসেছে। বিশেষ করে ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন এসব দেশে, তবে এবারের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে সেবার মানও উন্নত কিন্তু অনুন্নত দেশগুলোতে সেই পরিমাণ সেবা দানের ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার পথে রয়েছে। আয়তনের তুলনায় দেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি। মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইলের একটি দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষস্থানে রয়েছে বলে আমরা জানি। এরই মধ্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। গরিব দুঃখী মানুষের সংখ্যা এখন আরও বেড়ে গেল। এই প্রচ- শীতে তাদের পাশে না দাঁড়ালে অসহায় এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর দুর্দশা আরও বহুলাংশে বেড়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ছিন্নমূল মানুষগুলো এই প্রচ- শীতের রাতে বস্তিতে কিংবা ফুটপাথে রাত্রি যাপন করে, তাদের নেই তেমন কোন শীতবস্ত্র শীত নিবারণের জন্য। এসব ছিন্নমূল মানুষেরা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত, এর মধ্যে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ওষুধ কেনার সামর্থ্য এদের নেই, নেই শীতবস্ত্র কেনার অর্থ। এসব ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো কি ধনাট্য বিবেকমান মানুষের উচিত নয়? সৃষ্টির সেবা করলে স্বয়ং স্রষ্টা খুশি হন। ¯্রষ্টার আদেশ পালনার্থে তাই সকল ধনাট্য মানুষকে এসব অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। একজন চিকিৎসক যদি একজন শীতার্ত লোককেও সেবা দান করেন তবে সেটা হবে একটি মহৎ কাজ, অতি পুণ্যের কাজ। তেমনি একজন ধনী লোক যদি একটি কম্বলও দান করেন সেটাও হবে একটি মহাপুণ্যের কাজ। এসব অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের প্রতিটি অর্থবান মানুষের আশু কর্তব্য। অর্থ সংগ্রহ করে সকলের সমবেত চেষ্টায় এসব ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীতবস্ত্র ক্রয় করে, ওষুধ কিনে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মাঝে অবিলম্বে বিতরণ করা উচিত। এই কাজ করলে ছিন্নমূল মানুষগুলোর অনেক উপকার হবে। তাই আসুন আমরা সমাজের যে যেখানেই আছি এসব অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াই। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×