ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুয়েটে এসব কী হচ্ছে!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

বুয়েটে এসব কী হচ্ছে!

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের অন্যতম। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে-গবেষণায় অতীতের যার ছিল গৌরব, আজ সেসব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে পিছু ছাড়ছে না উগ্র সাম্প্রদায়িক বিতর্ক। অনেকদিন ধরেই অন্ধকারের ঘূর্ণাবর্তে খাবি খাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। এমনকি জঙ্গীবাদের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততাও মিলেছে। মুক্তমনার অস্তিত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে অনেক উঞ্ছবৃত্তির প্রসার ঘটেছে। বুয়েটের ৭২ শতাংশ শিক্ষক জামায়াত ও হিযবুত তাহরীর সদস্য বলে ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জঙ্গীবাদ ছড়াচ্ছে। এক শ্রেণীর উগ্রবাদী ছাত্র-শিক্ষক টার্গেট করে ‘মগজ ধোলাই’-এর মাধ্যমে নানাভাবেই নতুনদের জঙ্গী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ ও অন্তর্ভুক্ত করছে। জঙ্গীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে জঙ্গীবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ভিডিও ফুটেজ, জিহাদী বই, জিহাদী বক্তব্য সংবলিত অডিওর মাধ্যমে জঙ্গী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট, বুয়েটের কিছু ছাত্রকে জঙ্গী সন্দেহে আটকের পর তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের নয়জনের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশের বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মেধাবীরা শিক্ষার্থী, সেখানে তাদের অমানবিক নৃশংস জগতে ধাবিত হওয়ার কারণ কি? জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো আগে মাদ্রাসা থেকে তাদের কর্মী সংগ্রহ করত। গত ক’বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে বুয়েটের অনেক শিক্ষকই ধর্মীয় উগ্রপন্থায় জড়িত। জামায়াত-শিবির নামক ঘৃণ্য তৎপরতায় জড়িত সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যাও কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের আধিপত্য অনেকদিন থেকেই। তারা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাও দিয়ে থাকে। তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়েটেও এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ছাত্র-শিক্ষকরা ধর্মীয় উগ্রবাদিতার প্রসার ও বিস্তার ঘটাচ্ছে। বুয়েটের এই করুণ পরিণতি সম্প্রতি আরও বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের খাসির কথা বলে গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর এই পন্থা ও প্রক্রিয়া ন্যক্কারজনক হলেও এ জন্য কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সচেষ্ট। সর্বশেষ দিনকয়েক আগে বুয়েট এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে যা দেয়া হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ধর্মকে হেয় করার শামিল। বিভিন্ন বর্ণের অনুসারীরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। অথচ উপহার হিসেবে তাদের দেয়া হয়েছে ব্যাগভর্তি জায়নামাজ, কোরান শরিফ, হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়মকানুন আর আমপারা। বুয়েটকে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার এই প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্য শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান উপাচার্য থেকে শুরু করে শত শত বুয়েটার অংশ নেন। একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠানে ধর্মীয় জিনিস দেয়ার পরিকল্পনা কোন স্বাভাবিক চিন্তার ফসল নয়। ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হননের জন্য এই যে প্রক্রিয়া, এর সঙ্গে উগ্র ধর্মান্ধ, জঙ্গীবাদের সম্পৃক্ত থাকারই কথা। বুয়েট নামক বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি বাড়ানো যেমন জরুরী, তেমনি সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর তদন্তও প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করা সকল সুস্থমনা মানুষের দায়িত্ব।
×