ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের টুইটের জবাবে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র ৫৮ হাজার বার আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করেছে...

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ৫৮ হাজার বার আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করেছে...

তানিয়া হক ভূইয়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ ৪ জানুয়ারি টুইটারে দাবি করেছেন, তাদের ঘাঁটিগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৫৭ হাজার আট শ’ বার আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা ও প্রতারণামূলক বলে টুইটারে অভিযুক্ত করার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ আবেগময় ধারাবাহিক টুইট করেন। যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত জঙ্গী দমনে ব্যর্থতার ধুয়া তুলে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করেছে। খাজা আসিফ টুইটারে লেখেন, ‘আপনি জিজ্ঞেস করেছেন আমরা কি করেছি? ... আমাদের ঘাঁটিগুলো থেকে আপনারা আফগানিস্তানে ৫৭ হাজার আট শ’ বার হামলা চালিয়েছেনÑ আমাদের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্য এই লড়াইয়ে আপনাদের হামলার শিকার হয়েছেন।’ তিনি আফগান যুদ্ধে তার দেশের লোকের ত্যাগ স্বীকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আর নয়! আমাদের বাহিনীগুলো এখন এক অস্বাভাবিক যুদ্ধে লড়াই করছে। ইতিহাস আমাদের বলছে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধের মতো বিশ্বাস কর না। আমরা তাদের জন্য দুঃখ অনুভব করছি যারা এতে খুশি নয়। তবে আমরা আমাদের সম্মানের সঙ্গে আর কোন আপোস করব না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার টুইটগুলো শুরু করেছেন, সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশারফের পদক্ষেপ নিয়ে। এতে তিনি জানান, নিউইয়র্কে ৯/১১-এ সন্ত্রাসী হামলার সময় পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন মোশারফ। তিনি এমন এক শাসক ছিলেন যিনি মাত্র একটি ফোন কলে আত্মসমর্পণ করেন। আমাদের দেশ, আমরা সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। যে কারণে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। মোশারফ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন যুদ্ধে জড়ানো কেবল একজন নির্বোধের পক্ষেই সম্ভব। ট্রাম্পের টুইট সম্পর্কে বলতে গিয়ে আসিফ সেগুলোকে ‘ইসলামাবাদের বোকা লোকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপহার’ বলে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক কখনই ভাল ছিল না। ট্রাম্পের টুইটের পরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসিফ দ্রুতই টুইটারে তার প্রতিক্রিয়া জানান। আসিফ আরও লেখেন ২০০২ সালের ১১ জানুয়ারি গুয়ান্তানমো শিবির চালু হওয়ার পর থেকেই আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম। আপনার শত্রুকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছি। আপনাদের বন্দী শিবির আমরাই ভরে দিয়েছি।’ পাকিস্তান কিভাবে পাক যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের খুঁজতে সহায়তা করেছে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ সহায়তা করেছে। তাদের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে উগ্র সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতে পেরেছে। যা প্রতিটি সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থিত হয়েছে। আসিফ জানান, পাকিস্তান কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই সন্ত্রাসীদের খুঁজে দেয়নি বরং তারা একটি ব্ল্যাকওয়াটার অপকর্মের সুযোগ করে দিয়েছে। ‘আমরা ছড়িয়ে পড়া ব্ল্যাকওয়াটার নেটওয়ার্কের জন্য হাজার হাজার ভিসা দিয়েছি। আর গত চার বছর ধরে আমরা তাদের আবর্জনা পরিষ্কার করেছি।’ ১ জানুয়ারি ট্রাম্প টুইটে লেখেন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে গত ১৫ বছর তিন হাজার তিন শ’ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে। বিনিময়ে তারা আমাদের মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। তারা আমাদের নেতাদের বোকা বানিয়েছে। তারা আফগানিস্তানের সন্ত্রাসীদের তাদের দেশে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। সামান্য সহায়তার বিনিময়ে তারা আরও বেশি দিচ্ছে। আর নয়। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গুয়ান্তানামো বে কারাগারে যত অপরাধী আটক আছে তার মধ্যে আফগানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (২৯ ভাগ)। এ ছাড়া রয়েছে সৌদি আরবের (১৭ ভাগ), ইয়েমেনি (১৫ ভাগ) ও পাকিস্তানী (৯ ভাগ)।
×